বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ ঘিরে সিরাজগঞ্জ শহরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বেশ কিছু হাত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ রোডে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বিকেল ৪টার দিকে এ স্থানের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আসলেও পরে তা শহরের দত্তবাড়ি সড়ক, ইলিয়ট ব্রিজ ও রেলগেট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা পরস্পরকে দায়ী করেছেন। তবে ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশও হয়েছে।
জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল বলেন, বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরের ইসলামিয়া কলেজ মাঠে সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক শ্লোগান দেয় এবং ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এতে বাধা দিলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সরকারি ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন কাটাখালি সেতুর কাছে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে তাদের ২০/২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন যুবলীগ নেতা জুয়েল।
পাল্টা অভিযোগ করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানস বাচ্চু বলেন, নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসার পথে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাতে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তাদের ৩০/৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত হোসেন বলেন, সংবাদ পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে সরকারি ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন কাটাখালি সেতুর কাছে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ সময় বিপুল সংখ্যক টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এ স্থানটিতে সংঘর্ষ থেমে গেলেও পরবর্তীতে তা শহরের কয়েকটি স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
এদিকে, ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে দুপুর ২টার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ন ইসলাম খান, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, কেন্দ্রীয় যুব দলের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান মিলন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাজিদ হাসান বাবু।
স্থানীয়দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান লেবু, মকবুল হোসেন চৌধুরী, গাজী আজিজুর রহমান দুলাল, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রমুখ।
সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমি রাজনীতিতে জীবন দিতে রাজি আছি। কেননা জীবনবাজি রেখে এদেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করেছি। কাজেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া না হলে প্রয়োজনে তাকে মুক্ত করতে ৭১'র মতো যুদ্ধ ঘোষনা করা হবে এবং রনাঙ্গনের সৈনিক হিসেবে রাজপথে যুদ্ধ করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।
এ সময় তিনি সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। সন্ধ্যায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত শহরের দত্তবাড়ি সড়ক, ইলিয়ট ব্রিজ ও রেলগেট এলাকায় সংঘর্ষ চলতে দেখা গেছে।