রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৭ বৈশাখ ১৪৩২
 
শিরোনাম:


শেরপুরে ঋতুরাজ বসন্তে লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়
আরএম সেলিম শাহী, শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:৫৪ PM

ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতে আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে অনেক ফুল ফুটলেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না রক্তলাল নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। কালের বিবর্তনে আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়। বিগত এক-দেড় যুগ আগেও বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে কানাচে আর রাস্তার পাশে অনেক শিমুল গাছ দেখা যেতো। প্রতিটি গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিতো বসন্ত। শীতের পরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে সাথে সাথে প্রকৃতিতে লেগে যেতো তার ছোঁয়া। প্রতিটি গাছেই আসতে শুরু করেতো নতুন পাতা। প্রকৃতিতে দক্ষিণা বাতাসে আম্র মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ হতো চারিদিক। 

কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতালে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়া দোল খেতো। গাছে গাছে জেগে উঠত সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যেতো শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। শিমুল গাছের শাখাগুলো বসন্তের আগমনে লাল শাড়ির ঘোমটা পরা গ্রাম্য নববধূর সাজে সজ্জিত হতে দেখা যায়, যা দর্শনে হতাশ প্রেমিকের মনেও জাগিয়ে তোলে আশা। অন্যান্য গাছের তুলনায় শিমুল গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় বহু দূর থেকে এ মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। জোয়ার এনে দেয় কবির কল্পনার জগতে। কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না, শিমুল গাছের রয়েছে নানা উপকারিতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব। প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন শিমুল গাছ। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে। 

শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম “বোমবাক্স সাইবা লিন”। এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এ গাছ। সেই তুলনায় বেশ মোটাও হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে শিমুল গাছ দেড়শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সাথে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। 

অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। নেওয়া হয়না কোন যত্ন। অযত্ন আর অনাদরে প্রাকৃতিকভাবেই এ গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে অকারণে কেটে ফেলছে। অতীতে ব্যাপক হারে নির্মাণ কাজ, টুথপিকসহ নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে এটি আজ বিলুপ্তির পথে। শিমুল গাছ উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের উপরে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এগাছ অনেক উঁচু হওয়ায় কাক, কোকিল, চিল, বকসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি বাসা বেঁধে বসবাস করত। এ গাছ উজাড় হওয়ার ফলে এসব পাখিরা আবাসস্থল হারিয়ে পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। 

গাছ না থাকায় আবাসস্থলের অভাবে ধীরে ধীরে এসব পাখিরাও হারিয়ে যাচ্ছে। এই শিমুল ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত। এদিকে, একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। এর পরও এই গাছ নিধন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিমুল গাছ রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে এক সময় উপকারী গাছের তালিকা থেকে এ গাছটি হারিয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো জানতেও পারবে না বাংলার মাটিতে শিমুল নামের কোন গাছ ছিল।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

কুবির ‘সি’ ও ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন
মুরাদনগরে পুটি মাছ কাটা নিয়ে দ্বন্দ্ব, স্ত্রীকে খুন করে থানায় উপস্থিত স্বামী
ঢাকাস্থ কচুয়া সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কাজী ফজলুল করিম
গাজীপুরে বেতন বোনাস না পেয়ে শ্রমিকদের মানববন্ধন
কুমিল্লায় র‌্যাবের হাতে ১৬ হাজার ইয়াব, ৬ লক্ষ টাকাসহ ৪ জন গ্রেপ্তার
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

ফরিদপুরের সালথায় লাগাতার কাইজ্জা বন্ধে শালিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত
ফ্যামিলিস ইন পতুগাল কতৃক ১৪৩২ বর্ষবরণ "
সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে অহিংস দৃষ্টিভঙ্গির উপর গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ
শাহ্ গ্রুপের চেয়ারম্যানের সাথে ঢাকা ক্লাব ফ্রান্সের সৌজন্য সাক্ষাৎ
কুড়িগ্রাম জেলা সম্মিলিত শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য জোটের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com