রাতে ভারী খাবার খেয়ে শোয়ার পরেই শুরু হয় অস্বস্তি। কারো চোঁয়া ঢেকুর উঠে, কারো গলার কাছে জ্বালার মতো অনুভূতি হয়। মনে হয় যেন গলা দিয়ে অম্লরস উঠে আসছে। সেসঙ্গে শুরু হয় বুকে-পিঠে প্রচণ্ড যন্ত্রণা। এখন বেশিরভাগ মানুষই এমন সমস্যায় ভোগেন।
ভারী খাবার খাওয়ার পরে রাতে ঘুমানোর সঙ্গে বুক-গলায় যে অস্বস্তি হয়, তা সাধারণ গ্যাস বা অম্বলের নয়। এর চেয়েও বেশি হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘জিইআরডি’, অর্থাৎ ‘গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ’।
কেন রাতেই বেশি ভোগায় ‘জিইআরডি’?
প্রথমত, বেশি রাত করে খাবার খেলে এবং অতিরিক্ত তেল-ঝাল, মশলা দেওয়া খাবার খেলে তা হজম করতে পাকস্থলীকে বেশি অ্যাসিড ক্ষরণ করতে হয়। ফলে গ্যাসের সমস্যা বাড়ে।
রাতে বিশ্রামের সময়ে পাকস্থলী থেকে অম্লরস বেশি ক্ষরিত হয়। ‘জিইআরডি’ থাকলে মুখগহ্বর ও পাকস্থলীর সংযোগকারী খাদ্যনালীতে থাকা পেশির বলয়, যার নাম ‘লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিঙ্কটার’ বা ‘এলইএস’ খুলে যায়। ফলে সেই অম্লরস খাদ্যনালী বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করে। ফলে গলার কাছে জ্বালার মতো অনুভূতি হয়।
দীর্ঘ সময়ে না খেয়ে থাকার পর রাত করে খাবার খেলেও এমন সমস্যা হয়। যারা মধ্যরাতে চা বা কফি বেশি পরিমাণে খান অথবা মদ্যপান করেন, তাদের অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা বেশি হতে পারে।
বেশি রাতে গরম দুধ খেলে বা দুধের তৈরি খাবার বেশি খেলেও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা হতে পারে।
স্বস্তি মিলবে কীভাবে?
যে দিকে মাথা দিয়ে শোবেন, সেই অংশটি বালিশ দিয়ে একটু উঁচু করে রাখতে হবে। প্রয়োজনে দু’টি বালিশ একসঙ্গে রাখুন। খাবার খাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা পরে শোয়ার অভ্যাস করুন। খাওয়ার পর অন্তত ১০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে ভালো হয়।
রাতে ময়দার তৈরি খাবার খাবেন না। রাগি, বার্লি দিয়ে তৈরি খাবার, ওটস বা ডালিয়া খান। এতে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
রাতে শোয়ার আগে খেতে পারেন ক্যামোমাইল চা। ক্যামোমাইল অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর। এই চা খেলে হজম ভালো হয়, শরীরে প্রদাহ কমে।
অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে অ্যালোভেরার জুস। খাওয়ার আগে অল্প পরিমাণে অ্যালোভেরা জুস খান। বুক-গলা জ্বলা কমবে।
খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে এবং আধা ঘণ্টা পরে এক কাপ ঈষদোষ্ণ পানিতে এক চামচ অ্যাপল সিডার ভিনিগার গুলে খান। অম্বলের সমস্যা অনেক কমে যাবে।
রোজ সকালে খালি পেটে মৌরী-মেথি ভেজানো পানি বা জিরে ভেজানো পানি খেলে উপকার পাবেন।
গ্যাস্ট্রিকের কষ্ট বেশি হলে এক কাপ পানিতে এক চামচ জোয়ান দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। এরপর ছেঁকে ঠান্ডা করে জোয়ানের পানি অল্প অল্প করে খান। এতে গলা-বুক জ্বালার সমস্যা অনেক কমে যাবে।