প্রকাশ: রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:০৩ PM
টেস্টে নিজেদের পরিসংখ্যানটাকে একটু ভদ্রস্থ করতেই মূলত জিম্বাবুয়েকে সিরিজের আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ, এমনটা মনে করেছিলেন অনেকেই। এমন ধরণা খুব একটা অমূলকও নয়, কারণ একদিকে গত দুই দশকে ক্রিকেট শক্তিমত্তার বিচারে জিম্বাবুয়ে থেকে অনেক এগিয়ে গেছে টাইগাররা, অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের এই দলটাতে অভিজ্ঞতার বড় অভাব। অথচ, সেই ধারণাকে উল্টে দিয়ে আজ ভক্তদের খুব হতাশই করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
সবশেষ ২০০১ সালে এমন একদিন দেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ঢাকায় সেদিন বাংলাদেশ অলআউট হয় ১০৭ রানে। এরপর আর কখনোই দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দুইশোর নিচে অলআউট হয়নি টাইগাররা। দুই যুগ পর আজ আবার এমন একটা লজ্জাজনক দিন দেখতে হলো দেশের ক্রিকেট প্রেমীদের। টাইগার ব্যাটসম্যানদের খামখেয়ালিপূর্ণ ব্যাটিংয়ের চূড়ান্ত এক প্রদর্শনীই যেন দেখা গেল আজ সিলেটে। দিন শেষ না হতেই মাত্র ১৯১ রানেই গুটিয়ে গেল ইনিংস।
রোববার (২০ এপ্রিল) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য ভালো শুরুর আভাসই দিয়েছিলেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম। দু-তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান এবং উইকেটে সেটও হন তারা। তবে, বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দুজনের কেউই।
দলীয় ৩১ রানের মাথায় জিম্বাবুয়ে পেসার ভিক্টর নুয়াইসির ডেলিভারিতে ব্যাটের বাইরের কাণায় বল ছুঁইয়ে গালি অঞ্চলে ব্রায়ান বেনেটের হাতে ক্যাচ হন সাদমান। ২৩ বলে ১২ রান করেন বাঁহাতি এ ব্যাটার।
স্কোরবোর্ডে আর মাত্র এক রান যোগ হতেই উইকেট বিলিয়ে দেন আরেক ওপেনার জয়ও। ব্যাক টু ব্যাক বোলিংয়ে এসে তাকেও ফেরান নুয়াইসি। সাদমানের মতো জয়ও ব্যাটের বাইরের কাণায় বল লাগিয়ে উইকেটরক্ষক নিয়াশা মায়াভোর হাতে ধরা পড়েন। ৩৫ বলে ১৪ রান করেন ডানহাতি ব্যাটার। অর্থাৎ দলীয় ৩২ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রাথমিক এ ধাক্কা সামলে দলকে এরপর পথ দেখাতে থাকেন মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু, স্কোরবোর্ডে ৬৬ রান যোগ হতে ভেঙে যায় এ জুটি। দলীয় ৯৮ রানের মাথায় আউট হন শান্ত। ৬৯ বলে ৪০ রান করে ব্লেসিং মুজারাবানির বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মাধেভেরের হাতে ক্যাচ হন টাইগার অধিনায়ক। এরপর মুমিনুলের সঙ্গে নতুন ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের জুটি হয় মাত্র ২৫ রানের।
১৮ বলে মাত্র ৪ রান করে ফেরেন মুশফিক। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে শর্ট মিড উইকেটে ব্রায়ান বেনেটের হাতে ধরা পড়েন ডানহাতি অভিজ্ঞ ব্যাটার। মুশফিকের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টেকেননি মুমিনুলও। মাসাকাদজার বলে আউট হওয়ার আগেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফিফটি করে নেন বাঁ-হাতি ব্যাটার। ১০৫ বলে ৫৬ রান (৮ চার ও ১ ছক্কা) করেন তিনি। নতুন ব্যাটসম্যান মেহেদী হাসান মিরাজ হন মুজারাবানির শিকার। ৪ বলে ১ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মেহেদী। দলীয় ১৩৭ রানে পতন হয় ৬ উইকেটের। আট নম্বর ব্যাটসম্যান তাইজুল ইসলাম টেকেন ১৯ বল। তবে রান করেন মাত্র ৩। তিনিও হন মাসাকাদজার শিকার। ইনসাইড এজ হয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হন তাইজুল। ১৪৬ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শেষদিকে হাসান মাহমুদকে নিয়ে খানিকটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন জাকের আলী অনিক; গড়েন ৪১ রানের জুটি। ৩০ বলে ১৯ রান করে হাসান মাহমুদ আউট হলে ভেঙে যায় জুটিটি। পরে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন জাকের আলী। ৫৯ বলে ২৮ রান করেন ডানহাতি ব্যাটার।
৬১তম ওভারের শেষ বলে সর্বশেষ ব্যাটসম্যান নাহিদ রানার স্টাম্প উপড়ে ফেলেন ওয়েসলি মাধেভেরে। এতে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ৩টি করে উইকেট শিকার করেন ব্লেসিং মুজারাবানি ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। ২টি করে উইকেট নেন ভিক্টর নুয়াইসি ও ওয়েসলি মাধেভেরে।