প্রকাশ: বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:৫৪ PM
শেরপুর জেলায় চালু হয়েছে অদ্ভুদ এক প্রথা। কোন সংঘর্ষ, হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেই আসামী ও স্বজনদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায় গ্রামবাসী। যে যার মত প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে যায় নিজের বাড়ি। লুটপাটে বাদা দিতে আসলেই হামলার স্বীকার হতে হয়। এর থেকে পরিত্রান চায় গ্রামবাসী। পুলিশ সুপার বলছেন লুটপাটকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জানা যায়, আগষ্ট-২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারী ২০২৫ পর্যন্ত খুন-৩৫, ধর্ষণ-৫২, অপহরন-২৭টির মত ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেক সংঘর্ষ ও হত্যাকান্ডের পর আসামীসহ শত শত সাধারন মানুষের বাড়ি ঘড়ে হামলা ভাংচুর লোটপাট চালায় উশৃংখল গ্রামবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেরপুর জেলার সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের হরিনধারা গ্রামে একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকে কেন্দ্র করে গত ২২ ফেব্রুয়ারী দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের বল্লমের আঘাতে একজন নিহত হয়। তারপর থেকেই হরিনধরা পশ্চিমপাড়া গ্রামে শুরু হয় উশৃংখল গ্রামবাসীর লুটপাট। যে যার মত মাথায় এবং ভ্যান গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে মালামাল। দেখে মনে হতে পারে স্থানান্তর করা হচ্ছে ঘরের মালামাল। কিন্তু আসলে তা নয়। দিনের আলোয় প্রকাশ্যে লুটপাট হচ্ছে বাড়িঘর গুলোতে। গত দেড় মাসে এই গ্রামের প্রায় শতাধিক এর উপরে বাড়িঘরে লুুটপাট চালিয়েছে। গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায় বাড়িগুলোর প্রত্যেকটি ঘর ভেঙ্গে আসবাবপত্র, হাড়ি পাতিল, কাথা, বালিশ, ল্যাপ তোশক, টিনের চাল, বেড়া, বিদ্যুতের তার মিটার এমনকি দেয়ালের ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে।
ভুক্তোভোগী পরিবারগুলো জানায়, আমাদের গৃহপলিত পশু গরু-৭০টি, ছাগল-১৮০টি, কয়েকশত হাস মুরগি, সেচ পাম্প-৮০টি, পানির টেংকি-১৫টিসহ ঘরের ধান চাল ভুশিসহ প্রায় কয়েক কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে উশৃংখল গ্রামবাসী। লুট পাটে বাধা দিতে গেলেই হামলা চালায় তারা। এই ধরনের লুটপাট থেকে পরিত্রান চেয়ে গতকাল হরিনধরা গ্রামের কয়েকশতাধিক মানুষ মানববন্ধন করেছে। হরিনধারা পশ্চিমপাড়া গ্রামের হাতেম আলী বলেন, আমাদের গ্রামে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির দন্ধে একজন খুন হয়। তারপর থেকে এলাকার উশৃংখল কিছু মানুষ ব্যাপক ভাবে লুটপাট চালাচ্ছে। আমার বাড়ির পাঁচটি ঘর ছিলো সব গুলো ঘরই ভেঙ্গে যা ছিলো সব কিছু নিয়ে গেছে। ঘরের ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ লুট করেছে। আমাদের এখন থাকার জায়গা নেই। আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। যারা মামলার আসামী না ঢাকায় থাকে তাদের ঘর বাড়িও লুট করেছে।
আরেক বাসিন্ধা সুফিয়া বেগম বলেন, আমাদের পাড়ার প্রায় দুইশ ঘর ভেঙে যা ছিলো সব নিয়ে গেছে। আওয়ামিলীগ নেতা ছামেদুল এর নেতৃত্বে তারা সেচ পাম্প, গরু ছাগল, হাস মুরগি, ধান মারাই মেশিন বিদ্যুতের তার, মিটারসহ সব নিয়ে গেছে। খুনের বিচার আদালতে হবে। কিন্ত লুটপাটের বিচারও প্রশাসনের করতে হবে। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই। শেরপুর মডেল গার্লস কলেজের প্রভাষক মাসুদ হাসান বাদল বলেন, ৫ ই আগষ্ট পরবর্তী সময়ে আমাদেরকে চিন্তিত করেছে আইনের প্রতি মানুষের ভয়ভীতি কমেছে এবং আইন শৃংখলা বাহিনি মাঠে তৎপর না থাকায় শেরপুরে আইন শৃংখলার বেশ অবনতি হয়েছে। রাষ্টের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন এখন ল এন্ড ওয়ার্ডার ফিরিয়ে নিয়ে আসা।
শেরপুর জজ কোর্টের পিপি এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, মানুষ খুন হলে বিচার করবে আইন শৃংখলা বাহিনী এবং আদালত। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি শেরপুরে মার্ডার হলেই আসামী এবং তাদের আত্নীয়দের ঘর বাড়ি লুট হয়ে যাচ্ছে। যারা মার্ডার করছে এবং যারা লুটপাট করছে তারা দু পক্ষই অপরাধী। শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি শেরপুরে একটি বিষয়টি লক্ষ করলাম খুন হওয়ার পর আসামীরা বাড়িতে অনুপস্থিত থাকার সুযোগে একটি পক্ষ আসামীদের বাড়ি ঘর লুটপাট করে নিয়ে যায়। দেখুন আইন আসলে সবার জন্যই সমান। শেরপুরে যে কয়টি লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে আমরা তাদের অভিযোগও নিয়েছি। এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্যেও ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা এখনো লুটপাটের অভিযোগ দেয়নি তারা অভিযোগ দিলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।