প্রকাশ: বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫:৩৭ PM
ফিলিস্তিনের গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কাতারের দোহায় আলোচনা আলোর মুখতে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ওই আলোচনার মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার বলছে, আলোচকরা এখন একটি 'চুক্তির কাছাকাছি' অবস্থায় পৌঁছেছেন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে ওই চুক্তি সম্পাদিত হতে পারে। এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য দুই পক্ষকেই নমনীয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) মিশরের রাষ্ট্রপতির দপ্তরের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। গাজা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে বলেও জানানো হয়। আলোচনায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় সহজ করতে মিশর, যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতারের নেতৃত্বে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার ওপর আলোকপাত করা হয়।
গাজার তীব্র মানবিক সংকট নিরসনের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। গাজার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আরো মানবিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় মিশরের প্রেসিডেন্টের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে মিশরের অপরিহার্য ও ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং সংঘাত নিরসনের জন্য কূটনীতির তৎপরতা ছাড়া চুক্তিটি কখনোই সম্ভব হতো না। গাজার জনগণের জন্য তাৎক্ষণিক ত্রাণ সরবরাহের জন্য একটি চুক্তি জরুরি-ভিত্তিতে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন উভয় নেতা। যুদ্ধবিরতি চুক্তির সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাইডেন এবং সিসি। এর আগে, হামাস জানিয়েছে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি মঙ্গলবার বলেছেন, গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যে কোনো সময় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হতে পারে। ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো আগেই জানিয়েছিল, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি প্রায় প্রস্তুত এবং শুক্রবারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হতে পারে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমও আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির খবর জানিয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমান্তে হামলা চালায়, যার ফলে ২৫১ জন ইসরায়েলি নাগরিক এবং বিদেশি নাগরিক জিম্মি হন। বর্তমানে ৯৪ জন জিম্মি হামাস ও তাদের মিত্রদের হাতে বন্দি রয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী- এই ৯৪ জনের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মরদেহও জিম্মি মুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করবে হামাস। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা থেকে বাদ যায়নি ২৩ লাখ বাসিন্দার এই উপত্যকার মসজিদ, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, এমনকি শরণার্থী শিবিরও। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইসরায়েলি নির্বিচার হামলা গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, ইসরায়েলের নৃশংতায় গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজাবাসী চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে।