সন্তানকে মানুষ করতে মা-বাবাকে অনেক দিকেই খেয়াল রাখতে হয়। নানা সমস্যায়ও পড়তে হয়। সন্তান কোনো ঝামেলায় পড়লে বেশিরভাগ মা-বাবা নিজেরাই তার সমাধান বের করেন। কিন্তু ঝামেলায় পড়তে হয় যখন দায়িত্ব নিতে শেখানোর প্রসঙ্গ ওঠে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একজন মানুষকে নানা দায়িত্ব নিতে হতে পারে। এই শিক্ষার সূচনা করতে হবে ছেলেবেলা থেকেই। শিশুকে নানা বিষয়ে দায়িত্ব নিতে শেখানো উচিত সব মা-বাবার। এতে বয়সের সঙ্গে তার মানসিক পরিপক্বতা আসে। সে নিজেকে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলানোর জন্য প্রস্তুত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর বয়স যাই হোক, তাকে ছোটখাটো কাজ করতে দেওয়া উচিত। এর মাধ্যমে তার কগনিটিভ কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দায়িত্ববোধও তৈরি হতে থাকে। যত ছোট বয়স থেকে শিশুর মধ্যে দায়িত্ববোধ আসে, ততই সে নানারকম সমস্যার সমাধান করতে শেখে। অন্যের সমস্যা সমাধানেও এগিয়ে আসে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করতেও এটি বেশ প্রয়োজন।
মনোবিদ ডা. জ্যাসমিন ম্যাকয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত প্যারেন্টিং ও শিশুর যত্ন নেওয়ার বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি তিনি শিশুকে দায়িত্ব নিতে শেখানো সম্পর্কে কথা বলেছেন। এই মনোবিদ টুডলার থেকে টিনএজ পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সে বিভিন্নরকমের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছেন-
নবজাতক (প্রথম এক বছর): জন্মের পর একটি শিশু কয়েকমাস পর্যন্ত সময় নেয় চারপাশ চিনতে। এসময় মা-বাবার তার সঙ্গী হওয়া উচিত।
টুডলার (দুই থেকে তিন বছর): একটি শিশু যখন হাঁটতে শিখে তখন থেকে তাকে ধীরে ধীরে দায়িত্ব নিতে শেখানো যেতে পারে। কোনো কিছু কীভাবে ডাস্টবিনে ফেলতে হয়, খেলনা কী করে জায়গামতো রাখতে হয়, পাইপ দিয়ে গাছে পানি দেওয়া এসব দায়িত্ব দেওয়া যায় শিশুকে।
প্রিস্কুলার (চার থেকে ছয় বছর): এই বয়সে শিশুকে আরেকটু বড় দায়িত্ব দেওয়া যায়। খাওয়ার পর টেবিল পরিষ্কার করা, স্যান্ডউইচ বানানো, পাউরুটিতে জেলি লাগানো, নিজের জামাকাপড় নির্দিষ্ট স্থানে রাখা ইত্যাদি কাজের দায়িত্ব নিতে শেখান তাকে।
স্কুল যাওয়ার বয়স (সাত থেকে এগারো বছর): ঘরের অন্যান্য কাজের দায়িত্ব নেওয়ার বয়স এটি। শাকসবজি, ফল বা থালাবাসন কীভাবে গুছিয়ে রাখতে হয় তা শেখান। সঞ্চয় কীভাবে করতে হয় তাও শেখাতে পারেন। মাটির ব্যাংক কিনে দিতে পারেন তাকে। এসময় বেকিং বা ছোটোখাটো রান্নাও শেখাতে পারেন শিশুকে।
টিন-এজ (বারো বছরের বেশি): বাড়ির পোষ্যের খেয়াল রাখা থেকে তাকে স্নান করানো ইত্যাদির দায়িত্ব দিতে পারেন শিশুকে। পাশাপাশি মাঝে মাঝে বাজার থেকে জিনিস কিনে আনা শেখানো যেতে পারে। ছোট ভাই-বোন থাকলে তার দায়িত্ব নিতে শেখাতে পারেন শিশুকে। তাহলে আপনিও কিছুটা নিশ্চিত থাকতে পারবেন।
শিশুকে কম বয়স থেকেই দায়িত্ব নিতে শেখান। এতে পরবর্তীতে সে দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে উঠবে।