শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
 
শিরোনাম: নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ       ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা       একদিনে শনাক্ত আরও ৫১২ জন       দেশে আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত       সবার আগে বর্ষবরণ করলো নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া       শেষ সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতে ভিড়       ২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার অন্তত ১৩২১ নারী!      


কেন নারী পাচার থামছে না?
প্রকাশ: রোববার, ২০ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম |

ইমতিয়াজ মাহমুদ
মানব পাচার নতুন কোনো প্রবণতা নয়, ইতিহাসেরও আগে যেদিন থেকে মানুষ মানুষকে পণ্য করেছে তখন থেকেই মানব পাচার হচ্ছে। মানুষ মানুষকে তার ঘর থেকে, এলাকা থেকে, দেশ থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ভিনদেশে বিক্রি করে দিত। জড়ো করে ধরে নিয়ে যেত, যুদ্ধে জিতে বন্দী করে নিয়ে যেত- কিন্তু কেনাবেচাটা হতো পশুর মতো। এই কায়দা অনেকদিন ধরে চলেছে। আমরা এটাকে দাসপ্রথা বলে জানি। দাসপ্রথা যে বন্ধ হয়েছে সেটা খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। ইংরেজরা ১৮৩৩ সালে দাসপ্রথা বিলোপ করেছে আইন করে আর আমেরিকা করেছে ১৮৬৫ সালে। আইন করে বন্ধ হলেও বাস্তবে মানুষ কেনাবেচা এখনো বন্ধ হয়নি। বৈধ ও অবৈধ দুইভাবেই এখনো মানুষ কেনাবেচা চলে- বৈধভাবে যেটা হয় সেটাকে আমরা ম্যানপাওয়ার ব্যবসা বলি, আর অবৈধভাবে যেটা হয় সেটা হচ্ছে মানব পাচার। নারী ও শিশু পাচার অবৈধ মানব পাচারেরই একটা অংশ। নারী ও শিশু-কিশোরদেরকে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাচার করে নিয়ে সেখানে বেশ্যাবৃত্তিতে নিয়োগের জন্য বিক্রি করে দেওয়া হয়। কাজটা প্রায় সব দেশেই আইনের চোখে অবৈধ, আপনি এমনিতে এক দেশ থেকে আরেক দেশে বেড়াতে যেতে পারবেন বা সুনির্দিষ্ট কোনো কাজে যেতে পারবেন সেটা ঠিক আছে। কিন্তু মানুষ কেনাবেচা করা আর মানুষকে দেহ ব্যবসায় জোর করে নিয়োগ করা সেটা বৈধ নয়। কিন্তু অবৈধ হলেও প্রতিবছর অসখ্য নারী ও শিশু এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাচার করা হচ্ছে, বিক্রি করা হচ্ছে। কেন বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে ভারতে নারী ও শিশু পাচার হয়? বিপদজনক কাজ, পুলিশে ধরলে সাজা হবে, সামাজিকভাবে বদনাম হবে, তবুও করে। কেন?
অল্প কিছু হয়তো পুলিশের কাছে বা অন্য কোনোভাবে ধরা পড়ে, কেউ কেউ ফেরত আসে। কিন্তু বড় অংশটা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমাদের এই অঞ্চলে এই রকম কাজের বড় বাজার হচ্ছে ভারতের কয়েকটা বড় শহর। এইসব শহরে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে মেয়েদেরকে পাচার করে কেনাবেচা নৈমিত্তিক ঘটনা।
সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশের একটি মেয়ের উপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপারটা আবার সকলের নজরে আসে। আলোচনাটা আবার চাঙ্গা হয়।

এখন আলোচনাটা উঠেছে যে, এটা কী করে বন্ধ করা যায়। বন্ধ করা যে জরুরি সেটা নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই। কথা হচ্ছে বন্ধ করবেন কী করে? আপনি যদি একটা প্রবণতা বা সামাজিক প্রপঞ্চ নিবারণ করতে চান তাহলে তো আপনাকে আগে নির্ণয় করতে হবে যে এই ঘটনাটা কেন ঘটে? কেন নারী ও শিশুকে একদেশ থেকে আরেক দেশ পাচার করাটা লাভজনক?
আমরা সুনির্দিষ্ট করে প্রশ্নটা ঠিক করে নিই- কেন বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে ভারতে নারী ও শিশু পাচার হয়? বিপদজনক কাজ, পুলিশে ধরলে সাজা হবে, সামাজিকভাবে বদনাম হবে, তবুও করে। কেন? কারণ এটা লাভজনক একটা ব্যবসা। সামান্য কিছু টাকা বিনিয়োগ করে একটা মেয়েকে ফুসলিয়ে যদি কোনোরকমে মুম্বাই, কলকাতা বা বেঙ্গালুরুতে নিয়ে ফেলতে পারেন তাহলেই মোটা টাকা। এই যে নারী ও শিশুদের ক্রেতারা, এরা কেন মোটা টাকা দিয়ে মেয়েদের কেনা হয়? কারণ নারী দেহের চাহিদা আছে। বিপুল চাহিদা। কী রকম চাহিদা? ভারতের বড় বড় শহরে রেডলাইট এলাকাগুলোতে বা অন্যভাবে যারা এই ব্যবসাটা চালায় ওদের কাছে খদ্দেররা এসে ‘ফ্রেশ মাল’ চায়, ‘বিদেশি মাল’ চায়, ‘কচি মাল’ চায়। এইজন্যই নেপালি মেয়ে আর বাংলাদেশি মেয়ে এবং যৌবনপ্রাপ্ত হয়নি এমন মেয়েদের চাহিদা বেশি। নারীর পণ্য মর্যাদা কেটে দিয়ে যদি মানুষ মর্যাদা নির্ধারণ করতে পারেন তাহলেই কেবল চূড়ান্তভাবে এইসব অপকর্ম বন্ধ হবে, তার আগে নয়। তাহলে দৃশ্যটা কী দাঁড়াচ্ছে? দৃশ্যটা হলো, নারী হচ্ছে ভোগের পণ্য। এই পণ্য নিয়ে নানারকম ব্যবসা হয়। এইসব ব্যবসার মধ্যে সরাসরি ব্যবসা যেটা, সেটা হচ্ছে নানা দেশের, নানা বয়সের, নানা প্রকারের নারী দেহ সাজিয়ে রাখা যাতে করে খদ্দেররা এসে পছন্দমতো বেছে নিতে পারে। আপনি এমন একটা সমাজ তৈরি করবেন যেখানে নারী পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। নারী-পুরুষের শারীরিক যৌন তাড়না তো থাকবেই- কিন্তু নারী ও পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক সেটা দুজনের প্রেমময় মিলন হিসেবেই দেখবে সকলে, কাজটাকে কেউ পুরুষ কর্তৃক নারীকে ভোগ করা হিসেবে দেখবে না। নারীর পণ্য মর্যাদা কেটে দিয়ে যদি মানুষ মর্যাদা নির্ধারণ করতে পারেন তাহলেই কেবল চূড়ান্তভাবে এইসব অপকর্ম বন্ধ হবে, তার আগে নয়। নারীর পণ্য মর্যাদা কেটে দিয়ে যদি মানুষ মর্যাদা নির্ধারণ করতে পারেন তাহলেই কেবল চূড়ান্তভাবে এইসব অপকর্ম বন্ধ হবে, তার আগে নয়।
কিন্তু তাই বলে, এখন কিছু করার নেই? ক্ষুধার্ত ভিক্ষুককে আপনি বলবেন, অপেক্ষা কর বাছা, বিপ্লব আসন্ন প্রায়, তার ক্ষুধা দূর হবে? নাকি তাকে তখনই কিছু খাবারও দেবেন? তাৎক্ষনিক কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। কবে পিতৃতন্ত্র ভাঙবে, কবে বিপ্লব হবে তার জন্য কাজ করবেন বটে, কিন্তু আশু পদক্ষেপও কিছু নিতে হবে। সেইসব আশু পদক্ষেপ কী হতে পারে?
সেইখানেও আপনাকে আগে কারণ দেখতে হবে। কেন যায় মেয়েরা? কিসের প্রলোভনে যায়? তারা কাজের লোভে যায়। নিতান্ত দিনমজুরের কাজ বা গৃহকর্মীর কাজের লোভ দেখিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার মানে কি? আপনি যদি দেশের মধ্যেই সকলের জন্য কাজের ব্যবস্থা এবং কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারেন তাহলে তো মেয়েদেরকে প্রলোভন দেখানো সহজ হবে না। ভাই, আমার যদি দেশেই কাজের সুবিধা থাকে তাহলে আমি কেন যাব অজানা-অচেনা দেশে? সেই সাথে পুলিশের নজরদারি, সামাজিক সচেতনতা তৈরি এইসব তো থাকতেই হবে। আন্তরিকভাবে পুলিশি নজরদারি, বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সচেতন করতে হবে সবাইকে। তাহলে সমস্যার ভয়াবহতা আর থাকবে না।
সমস্যাটা থেকেই যাবে, কেন না নারীকে ভোগের পণ্য বা ‘মাল’ বিবেচনা করার রাজনীতি তো আর পৃথিবী থেকে আগামী পরশুদিনই দূর হবে না। কিন্তু ঘটনা খানিকটা কমবে, অনেকাংশে কমবে, এইটা আমার বিশ্বাস।
    লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট







প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com