শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
 
শিরোনাম: নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ       ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা       একদিনে শনাক্ত আরও ৫১২ জন       দেশে আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত       সবার আগে বর্ষবরণ করলো নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া       শেষ সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতে ভিড়       ২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার অন্তত ১৩২১ নারী!      


বিধিনিষেধ-ভোগান্তি ঠেলে ঈদযাত্রা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম |

নিজস্ব প্রতিবেদক :  
করোনা সংক্রমণ কমাতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে দূরপাল্লার পরিবহন না চালানো ও দিনের বেলায় ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থাকলেও ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের স্রোত আটকানো যাচ্ছে না। গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে ভোগান্তি টেনে ও অতিরিক্ত ভাড়া গুণে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছুটছে মানুষ। গতকাল সোমবার রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, শ্যামলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, হাতে ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছে মানুষ। সিএনজি, ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে যে যেভাবে পারছেন ঢাকা ছাড়ছেন। এদিকে স্বাভাবিক করে দেয়া হয়েছে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের ফেরি। আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ থাকলেও গাবতলী পুলিশ বক্সের আগে কয়েকটি বাসকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত যাত্রী নিতে দেখা যায়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে পরিবহন চালানো কিংবা জেলার বাইরে না যাওয়ার নিয়মকে তোয়াক্কা না করে এসব গাড়ি চলছে। ডি লিংক, ঠিকানা পরিবহনের দুটি বাস যাত্রীপ্রতি ৩০০ টাকা করে ভাড়া নিয়ে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া যাচ্ছে জানিয়ে ঠিকানা বাসের এক হেলপার বলেন, ‘এখন ফেরি বন্ধ; তবে রাতের দিকে ফেরি খুলে দেয়। আমিনবাজার থেকে উত্তরবঙ্গগামী বাসও ছাড়ে রাতে। এ কারণে যাত্রীদের ভিড় আছে।’ এদিকে সিএনজি, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ছোট ও হালকা যানবাহনে সাভার, বাইপাইল ও পাটুরিয়া যাচ্ছেন যাত্রীরা। এক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের। বেশিরভাগ মানুষই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। উপেক্ষিত হচ্ছে সামাজিক দূরত্বও। ব্যবসায়ী নাজমুল হাসান ব্যাগ গুছিয়ে ছুটছেন আমিনবাজারের উদ্দেশে। তার গন্তব্য যশোর। গাড়ি আমিনবাজার থেকে ছাড়বে শুনে তিনি গাবতলী থেকে ৫০ টাকায় ভ্যান ভাড়া করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমিনবাজার থেকে একটা ব্যবস্থা করবো, বাস যদি না পাই তাহলে আবার ফিরে আসবো।’ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শত ভোগান্তি নিয়ে তারা গ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে চান। মানসুর ও আবেদিন ঢাকার একটি পলিটেকনিক কলেজে পড়েন। লকডাউন, তীব্র রোদ উপেক্ষা করে দুই বন্ধু যাত্রা শুরু করেছেন। তাদের গন্তব্য পাবনার আরামবাড়িয়া। রাজধানীর তেজগাঁও থেকে গাবতলীর যাত্রা সুখের হলেও এরপর শুরু অনিশ্চিত যাত্রা আর পদে পদে ভোগান্তি। আবেদিন বলেন, ঢাকার মেসে ঈদ কীভাবে করবো? ঈদ তো বছরে দুবার আসে। কষ্ট হলেও বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করবো।’
সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রশাসন ম্যানেজ করে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক বলেন, ‘বাস রাতে ছাড়ে। আমিনবাজার, সাভারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকেই বাস জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আবার যাত্রীরা আরিচা, পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত কষ্ট করে যায়। ফেরি পার হলে অন্য জেলার বাস পাওয়া যায়।’ যাত্রীরা বলছেন, ভেঙে ভেঙে যেতে তাদের বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। পাবনার যাত্রী মানসুর বলেন, ‘এক জায়গায় কথা হয়েছে। বলছে রাতে গাড়ি ছাড়বে আমিনবাজার থেকে। ভাড়া ২ হাজার টাকা বলছে। ভাবছি ভেঙে ভেঙে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে যাব। মোটরসাইকেলে ব্রিজ পাড় হয়ে ওপার থেকে আবার গাড়ি, অটোরিকশা যা পাই তা দিয়ে বাড়ি চলে যাব। সেতু পাড় করে দিতে মোটরসাইকেলে ৪০০ টাকা দিতে হবে শুনেছি। এভাবে দেখা যাচ্ছে বাড়ি যেতে এ হাজার থেকে পনেরশ টাকা খরচ হবে।’
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলগামী যাত্রীরা ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে রাজবাড়ীর বাসে ফরিদপুরের সীমানা সাইনবোর্ড পর্যন্ত, ফরিদপুর থেকে কামারখালী ব্রিজ পর্যন্ত, মাগুরার বাসে সীমাখালী হয়ে যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

জানতে চাইলে কর্মরত বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা বলবত রাখতে আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন গাড়িকে জরিমানা করেছি। কিন্তু জনসাধারণের সহযোগিতা পাচ্ছি না। এ সময় যদি সবাই সহযোগিতা না করে তাহলে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’ গাবতলী এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য প্রিয়াংকর রায় বলেন, ‘পিকআপ ভ্যান, গাড়িতে করে অনেকেই ঢাকা ছাড়ার চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, তারপরও অনেকেই আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন।’
এদিকে চাপের কারণে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল এখন স্বাভাবিক। তাই ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের আর বিড়ম্বনা পোহাতে হবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) বাংলাবাজার ঘাট ম্যানেজার সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ?‘এখন থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক। ঘাটে আটকে পড়া কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করে দিয়েছে। এখন সব ধরনের ফেরি চলাচল করবে। তাই ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের আর বিড়ম্বনা পোহাতে হবে না।’
অপরদিকে গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ঈদুল আজহাতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়। এরপরই বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে সবাই। আর এবছর ঈদযাত্রা যেন ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে দেশে, আরেকদিকে মানুষ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্দেশনা, কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েও ঘরে রাখা যাচ্ছে লোকজনকে। বৃহস্পতিবার থেকে মানুষ ছুটছে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে।
গত বছরও ঈদুল আজহার ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকাতে বলা হয়েছিল। ২০২০ সালে ১৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ জুলাই বা ১ আগস্ট ঈদুল আজহা পালিত হবে। তবে যেদিনই পালিত হোক, ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন এই তিন দিন সরকারি ছুটি থাকবে। কিন্তু তারপরও মানুষকে থামানো যায়নি। এবছরও সর্বশেষ জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা আছে কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না। কিন্তু ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা ছেড়েছে লাখো মানুষ। এবছর ১৯ এপ্রিল করোনায় দেশে ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। আর নতুন রোগী শনাক্ত হয় ৪ হাজার ২৭১ জন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় সরকার। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে শনাক্তের হার কমতে শুরু করে। করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই সময়ে সবচেয়ে সংকটময় অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। গত বছর ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়। এদিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৯ জন। এবছর ১৯ এপ্রিলে এক দিনে নতুন রোগী শনাক্ত হয় ৪ হাজার ২৭১ জন।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। এই সময়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য ফেরিতে যে গাদাগাদি হয়ে মানুষ পার হতে দেখা গেল তা আগামী ১৪ দিন পরে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাÍক চেষ্টা করা হয়েছে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। নিষেধাজ্ঞা দিলে নিুবিত্তের দুর্দশার কথা বলা হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলে সবাই মার্কেটে ভিড় করলেন। মানুষের ভেতর বেপরোয়া ভাব চলে এসেছে যা বিপদ বাড়াবে।








আরও খবর


প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com