অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা, ভুল খাদ্যাভ্যাস, অনিয়ম আর বাড়তি কাজের চাপ ডেকে আনে নানা রোগব্যাধি। যত বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছি আমরা, ততই বাড়ছে শারীরিক জটিলতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ওবেসিটি, কোলেস্টেরল, থাইরয়েডের মতো সমস্যা। আর এসব রোগের হাত ধরেই বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি।
রোজকার বেশ কিছু ভুল আমাদের ঠেলে দিচ্ছে হৃদরোগের দিকে। হার্টের যাবতীয় অসুখবিসুখকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বলা হয়। এই রোগের ঝুঁকি যাদের বেশি, তাদের দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ‘নন-মডিফায়েড রিস্ক ফ্যাক্টর’ এবং ‘মডিফায়েড রিস্ক ফ্যাক্টর’। প্রথমভাগ চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না। এক্ষেত্রে যাদের বাবা-মা কিংবা পূর্বপুরুষদের হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে, যাদের বয়স বেশি— তাদের হৃদরোগের ঝুঁকিও বেশি। চাইলেই এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয়।
দ্বিতীয় ভাগ চাইলে পরিবর্তন করা যায়। হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে প্রতিদিনের কোন অভ্যাসগুলোতে পরিবর্তন আনবেন চলুন জেনে নিই-
ছাড়তে হবে ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস
হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে সবার আগে ছাড়তে হবে ধূমপানের অভ্যাস। ধূমপান ও তামকজাত দ্রব্য হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম বড় কারণ। পাশাপাশি লাগাম টানতে হবে মদ্যপানেও।
নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ওজন
যার যত ওজন বেশি, তার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বেশি। উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন কত হওয়া উচিত, তা জানুন। ওবিসিটি থাকলেই সাবধান হোন। ওজন কমানোর জন্য ডায়েটের ওপর নজর দিন। কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমাতে হবে। খেলেও রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ, সাধারণ পাউরুটির বদলে ব্রাউন ব্রেড, ময়দার রুটির বদলে আটার রুটি খেতে পারেন।
ডায়েটে বেশি করে শাকসবজি ও ফল রাখতে হবে। অল্প অল্প করে বার বার খান। বাইরের খাবার না খেয়ে বাড়িতে তৈরি খাবার খান। ভাজাভুজি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, রেডমিট এড়িয়ে চলুন। খাবারে লবণ ও চিনির পরিমাণ কমিয়ে আনুন।
শরীরচর্চায় নজর দিন
হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন শরীরচর্চা করতেই হবে। ৭ দিন করতে পারলে আরও ভালো। ভারী শরীরচর্চা না করলেও রোজ অন্তত পক্ষে আধা ঘণ্টা দ্রুত গতিতে হাঁটতে পারেন। সঙ্গে কিছু হালকা ব্যায়াম করলেও হবে।
ঘুম জরুরি
রাতে ঠিক মতো ঘুম না হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে দেখা দিতে পারে স্ট্রোক, হার্টের সমস্যা। নিয়মিত যদি ঠিক মতো ঘুম না হয়, তাহলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ ভালো মতো হয় না। কাজেই শরীর তখন স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়, ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা দেখা দেয়।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হোন
পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে নানা বিষয় নিয়েই আমরা অত্যধিক চাপে থাকি। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি তো বাড়েই, সেই সঙ্গে দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ, বেশি খাওয়া, ধূমপান, ঘুমের সমস্যা, ক্লান্তি। সেই জন্য কোনো ধরনের মানসিক চাপ বা উদ্বেগকে প্রশ্রয় না দেওয়ার চেষ্টা করুন।
মনঃসংযোগ বাড়াতে ধ্যান করতে পারেন। বই পড়া কিংবা গান শোনার অভ্যাস থাকলে, সেগুলোও চাপমুক্ত করতে সাহায্য করে। কাজের সময় কাজ করুন। অফিসের কাজ বাসায় টেনে আনবেন না। অবসরে নিজের পছন্দের কাজ যেমন ঘুরতে যাওয়া, ছবি তোলা, সিনেমা দেখার ওপর জোর দিতে পারেন।