প্রকাশ: বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:৩৫ PM
মরণ শাশ্বত! প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এ কথা সবাই জানলেও মনের ভেতর একটা ভয় কাজ করে। মৃত্যুর আগের মুহূর্তে মানুষ কী ভাবে? কী দেখে জীবনের শেষ কিছু মুহূর্তে?
মৃত্যু নিয়ে বহু মানুষ গবেষণা করেছেন। মৃত্যুর আগে মানুষের মানসিক কী কী অবস্থা দেখা দেয়, আগের মুহূর্তগুলো কেমন হয়— এসব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালাচ্ছেন বহু মানুষ। মৃত্যুর আগের মুহূর্তে মানুষের মস্তিষ্কে ঠিক কী চলে তা নিয়ে এখনও বিজ্ঞান বিস্তারিত উত্তর দিতে পারেনি। তবে মার্কিন চিকিৎসক ক্রিস্টোফার কের ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হন যা তার কর্মজীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ড. ক্রিস্টোফারের একজন রোগী ছিল মেরি নামে। একদিন তিনি দেখেন মেরি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন এবং তার চারপাশে ঘিরে আছেন তার চারজন সন্তান। যারা প্রত্যেকেই প্রাপ্তবয়স্ক।
জীবন সায়াহ্নে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার সময়ে মেরি অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করেন। ড. ক্রিস্টোফারের তথ্য অনুযায়ী, ৭০ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধা মৃত্যুর আগ মুহূর্তে বিছানায় উঠে বসেন এবং এমনভাবে নিজের হাত নাড়তে থাকেন যেন তিনি একটি শিশুকে জড়িয়ে ধরে আছেন। যাকে কেবল তিনিই দেখতে পাচ্ছেন। কাল্পনিক সেই শিশুকে বৃদ্ধ মেরি ড্যানি বলে ডাকছিলেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরে অদৃশ্যভাবেই চুমু খাচ্ছিলেন। মেরির সন্তানরা এ আচরণের ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তারাও এটিও জানান যে ড্যানি নামে কাউকে তারা চেনেন না। পরদিন, মেরির বোন হাসপাতালে আসেন এবং জানান যে মেরি তার অন্যান্য সন্তানদের জন্ম দেয়ার আগে ড্যানি নামে একটি মৃত ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। সেই বেদনা এতটাই তীব্র ছিল যে মেরি তার হারানো সন্তানের কথা কখনো কাউকেই বলেননি।
মেরির এমন আচরণ ড. ক্রিস্টোফারের কাছে এতটাই বিস্ময়কর মনে হয়েছে যে তিনি তার কার্ডিওলজি প্র্যাকটিস থেকে সরে এসে মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ কেমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যান সে বিষয়ে গবেষণার সিদ্ধান্ত নেন। তার মতে, জীবন সায়াহ্নে থাকা মানুষ সাধারণত তাদের মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া শুরু করেন। মৃত্যুর সময় যত ঘনিয়ে আসে এর তীব্রতা ততই বাড়তে থাকে। তিনি দেখেছেন তারা তাদের মা, বাবা, সন্তান এবং এমনকি পোষা প্রাণীদের সাথে কথা বলছেন যারা বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন।
এ বিষয়ে এজিং নিউরোসায়েন্স জার্নালেও একটি তথ্য প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, আমাদের মস্তিষ্ক মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত সচল থাকে। পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে মৃত্যুর ৩০ সেকেন্ড আগে কোনো ব্যক্তির মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যক্তি তার পুরো জীবন চোখের সামনে দেখতে পায়, স্মৃতিচারণ করে।