বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদনে-২০২৩ এর তথ্য অনুযায়ী দেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। আগের বছর যা ছিল ৭২ দশমিক ৪। বিবিএসের হিসাবে, দেশে পুরুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৮ বছর। অন্যদিকে নারীর গড় আয়ু হয়েছে ৭৩ দশমিক ৮ বছর। এর মানে, গড় হিসাবে এ দেশে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন। প্রত্যাশিত গড় আয়ু মানে হলো, ২০২৩ সালে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা গড়ে ৭২ দশমিক ৩ বছর আয়ু পেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে বিগত ২৪/০৩/২৪ রোববার এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয় (সূত্র: প্রথম আলো, ২৫ মার্চ ২০২৪)। ৬০ বছর হলেই নাকি প্রবীণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। সেক্ষেত্রে আমিও একজন প্রবীণ। কারণ ১৯৫৬ সালের ১৪ জুলাই আমার জন্ম। গড় আয়ু বাড়ায় সবাই খুশী হলেও আমি কিন্তু খুশী হতে পারিনি। কারণ প্রবীণগণ আমাদের সমাজে দুঃসহ জীবন যাপনে অসহায়ত্ব ও দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘজীবন পেলেতো এর মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। সকল প্রবীণ ব্যক্তিই এ বয়সে পরিবারের জন্য নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়, যা বেশীর ভাগ পরিবারের দৃষ্টিতেই প্রবীণ ব্যক্তিটিকেই প্রতিকূলতার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেন। প্রবীণ ব্যক্তিটির সকল অর্জনকে বিন্দু মাত্র সম্মান না দিয়ে তার কর্মহীন প্রবীণ বয়সটিকে নিয়ে অযথা অবহেলা-অসম্মান করে। প্রবীণ ব্যক্তিটির উত্তরাধিকারগণ একবারও ভাবেন না যে তারাও একদিন প্রবীণ হবেন।
প্রবীণ ব্যক্তিটির মানসিক ও শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকা সত্ত্বেও কোনরূপ উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে না পেরে একাকী বাসায় থেকে থেকে যখন খিট্ খিটে স্বভাবে পরিণত হয় তখন পরিবারের অন্য সদস্যরা বিষয়টিকে ভালভাবে অনুধাবন করার চেষ্টা করলে অর্থাৎ পরিবারের মুরুব্বী/খুঁটি/শিকড় যা'ই বলিনা কেন তাহলে হয়তো এ রকম বিড়ম্বনার সৃষ্টি হতো না। যখনই এর ব্যত্যয় ঘটে, তখনই শুরু হয় প্রবীণজনিত অশান্তি।
প্রতি বছর ১ অক্টোবর আমরা অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করি। এ দিবসে আলোচকগণ প্রবীণদের নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর লেখা উপস্থাপন করেন তাঁদেরকে সম্মানিত করার জন্য। সময়ের বিবর্তনে এরপরই হারিয়ে যায় ঐ দিনটির সুন্দর সুন্দর কথা ও লেখার বিষয়বস্তু। আমাদের সমাজের একটি বৃহৎ অংশ গ্রামে বাস করে। গ্রামের প্রবীণ লোকগুলো জানতেও পারেনা প্রবীণ দিবসের কথা বা এ দিবসে প্রবীণদের কী কী করণীয় বা বর্জনীয়। আমাদের এই ঘুণে ধরা সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে যে নবীনদের পাশাপাশি প্রবীণদেরও প্রয়োজন তা আমরা কোনক্রমেই মানতে রাজী নই। কেন রাজী নই? আমি বুঝিনা। প্রবীণদের যে অভিজ্ঞতা তাকে যদি আমরা উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই, তাহলে আমার বিশ্বাস এতে করে প্রবীণদের প্রতি নবীনদের এ আচরণ অত্যন্ত সম্মানজনক, বিনয়ী ও কৃতজ্ঞতাপূর্ণ হতো। তাই বার্ধক্যে থাকা লোকজনকে যদি দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে শরীক করা যেত তাহলে তাঁদের মানসিক, শারীরিক ও পারিবারিক অবস্থা অনেক শান্তিময় হতো। এ কারণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রবীণদের সক্ষমতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় ৬০ পরবর্তী বয়সকে যদি জীবনের দ্বিতীয় ধাপ আখ্যায়িত করে সম্মানজনক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে আমার বিশ্বাস প্রবীণদের প্রতি আমাদের যে অবজ্ঞা, অবহেলাগুলো আছে, তা ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মানে পরিণত হতো।
জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের একটি বিরাট অংশ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে। এ কারণে ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাই সার্বক্ষণিক জীবিকার প্রয়োজনে জীবন যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় প্রবীণদের অবস্থা হয়ে ওঠে আরও বেশী দুর্বিষহ, মানবেতর ও সংকটাপূর্ণ।
আমাদের সমাজে কোন এক সময় একান্নবর্তী
যৌথ পরিবার ছিল। তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যবোধ ছিল লক্ষণীয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অর্থ-সম্পদ ভাগাভাগিতে যৌথ পরিবারের বিলুপ্তি ঘটে এবং প্রবীণজনিত সমস্যা দৃশ্যমান হয়।
আমার দৃষ্টিতে প্রবীণজনিত সমস্যা মূলত ৩(তিন) ধরনের। যা নিম্নরূপ:-
★ প্রথম স্তর/নিম্ন স্তর :- রাস্তা-ঘাট ও বস্তিতে বসবাসকারী লোকজন। যারা আধপেটা খেয়ে না খেয়ে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে আমাদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার অনুপস্থিতিতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
★ দ্বিতীয় স্তর/মধ্যম স্তর:- চাকুরী, ব্যবসা-বানিজ্য শেষে যারা বার্ধক্যজনিত শারীরিক সমস্যায়
প্রবীণ হয়ে তার অর্জিত সম্পত্তি ওয়ারিশদের মাঝে ভাগ-বন্টন করে চিন্তামুক্ত হতে চান তখনই বিভিন্ন দোষে দুষ্ট আখ্যায়িত হয়ে প্রবীণ লোকটি অতি আপনজন দ্বারা আক্রান্ত হন।
এক্ষেত্রে নচিকেতার বিখ্যাত একটি গানের কথা উল্লেখ করতে চাই -
ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায়না দেখা এপার-ওপার।
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী।
সবচেয়ে কমদামী ছিলাম একমাত্র আমি।
ছেলে আবার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।
আমার ব্যবহারেরই সেই আলমারী আর আয়না
ওসব নাকি বেশ পুরোনো ফ্ল্যাটে রাখা যায়না।
ওর বাবার ছবি, ঘড়ি, ছড়ি বিদেয় হলো তাড়াতাড়ি
ছেড়ে দিলো, কাকে খেলো পোষা বুড়ো ময়না।
স্বামী স্ত্রী আর এলসেসিয়ান জায়গা বড় কম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।
নিজের হাতে ভাত খেতে পারতো না কো খোকা
বলতাম "আমি না থাকলে রে কি করবি বোকা"।
ঠোট ফুলিয়ে কাঁদতো খোকা আমার কথা শুনে
খোকা বুঝি আর কাঁদেনা, নেই বুঝি আর মনে।
ছোটবেলা স্বপ্ন দেখে উঠতো খোকা কেঁদে
দুহাত দিয়ে বুকের কাছে রেখে দিতাম বেঁধে।
দুহাত আজো খুঁজে, ভুলে যায় যে একদম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।
খোকারও হয়েছে ছেলে দুবছর হলো
আরতো মাত্র বছর পঁচিশ, ঠাকুর মুখ তোলো।
একশ বছর বাঁচতে চাই, এখন আমার ষাট
পঁচিশ বছর পরে খোকার হবে ঊনষাট।
আশ্রমের এই ঘরটা ছোট, জায়গাও অনেক বেশী
খোকা আর আমি দুজনে যে থাকবো পাশাপাশি।
সেই দিনটার স্বপ্ন দেখি ভীষণ রকম
মুখোমুখি আমি খোকার বৃদ্ধাশ্রম।
মুখোমুৃখি আমি খোকার বৃদ্ধাশ্রম।
মুখোমুখি আমি খোকার বৃদ্ধাশ্রম।
বাবা-ছেলের এ অবস্থা আমাদের নিকট কোনক্রমেই কাম্য নয়।
★ তৃতীয় স্তর/উঁচু স্তর:- অর্থ-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবকিছু থাকা সত্ত্বেও যৌবনকালের কিছু ভুল-ত্রুটির কারণে ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে তৈরী হয় এক বিরাট দূরত্ব। এ কারণে প্রবীণ অবস্থায় আপনজনদের অনুপস্থিতিতে একাকী অসহায় জীবন যাপন কালে উপলব্ধি করেন তার প্রথম জীবনের ভুলগুলো। যা থেকে উত্তরণের কোন সুযোগ আর অবশিষ্ট থাকেনা।
এখানে আমি বেরী গর্ডির কিছু মূল্যবান কথা উল্লেখ করতে চাই :-
একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো সাফল্যর পর সুখ
অনেকে বলে থাকে, "হে বৎস আমাকে সাফল্য দাও,
সুখের কথা পরে চিন্তা করবো"। দুর্ভাগ্যবশত: বাস্তবে এভাবে ঘটেনা।
যদি সাফল্যের কথা বিবেচনা করার আগে
তুমি যদি সুখ বিবেচনা না কর, তাহলে তুমি যে প্রক্রিয়ায় সাফল্য অর্জন করবে, তা পরে তোমাকে ধ্বংস করবে।
অনেকে সাফল্য আরোহণের জন্য দৌড়ে উপরে উঠতে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, দৌড়াতে গিয়ে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের, শত্রুদের এবং সবচেয়ে মর্মান্তিক, তাদের বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের পদদলিত করে ফেলেন যে, যখন তারা উপরে পৌঁছেন এবং পৌঁছে চারিদিকে তাকান, তখন আবিস্কার করেন যে, তারা নি:সঙ্গ এবং অসুখী।
তারা আমাকে প্রশ্ন করেন-
আমি কোথায় ভুল করলাম?
সবসময় আমার উত্তর
"সম্ভবত শুরুতেই"
(অনুবাদ: খন্দকার মাহমুদুর রহমান)
প্রাক্তন পরিচালক, বিআরডিবি, ঢাকা।
এ অবস্থা আমাদের নিকট কোনক্রমেই কাম্য নয়।
আজ যে লোকটি প্রবীণ, সেই একদিন জীবন-যৌবন দিয়ে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে পরিবারের সদস্যদের জন্য তৈরী করেছেন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনে স্বাচ্ছন্দে চলার এক স্বপ্নের প্লাটফরম। প্রবীণ লোকটি তাঁর সকল যোগ্যতা ও মেধা খাটিয়ে যে মজবুত প্লাটফরমটি রচনা করলেন, সেই নিরাপদ প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতি বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে আমরা হয়ে উঠি চরম অকৃতজ্ঞ।
ধর্মে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান আর ছোটদের প্রতি স্নেহ, আদর, ভালবাসার কথা গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ আছে।
প্রবীণগণ হচ্ছে সমাজের শিকড়। এ শিকড়কে যে সকল নবীনরা অস্বীকার করে, যথাযথ মূল্যায়ন করেনা, তারাই তাদের প্রবীণ সময়ে অর্থশালী, সম্পদশালী, প্রভাবশালী হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যাশিত মূল্যায়ন না পেয়েই দুঃখ-কষ্টকে বরণ করে বিবর্ণ অবস্থায় ইহধাম ত্যাগ করেন।
এ অবস্থা আমাদের নিকট কোনক্রমেই কাম্য নয়।
প্রবীণদের সম্মান দেয়া, মর্যাদা দেয়া ও সহায়তা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
বর্তমানে আমাদের দেশের প্রবীণরা হয়ে গেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলোয়াড়ের মত। আহামরি কিছু করতে না পারলে তাকে যেমন প্যাভিলিয়নে বসিয়ে রেখে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর অন্যায় আচরণ করেন। তখন সেই ক্রিকেটারের অসহায়ত্ব দেখে আমরা যেমন অনুতাপ করি ঠিক আমাদের প্রবীণদের অবস্থাও তদ্রূপ।
এ অবস্থা আমাদের নিকট কোনক্রমেই কাম্য নয়।
প্রবীণ ব্যক্তিটির সকল অর্জন যেন এক নিমিষেই উড়ে যায় যখন সে তাঁর কর্মস্থল, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য পেশা থেকে একটু শান্তির প্রত্যাশায়
বার্ধক্যজনিত কারণে অবসর নেয়, তখনই নেমে আসে তাঁর জীবনে আস্তে আস্তে অমানিশার ঘোর অন্ধকার।
এ অবস্থা আমাদের নিকট কোনক্রমেই কাম্য নয়।
সুস্থ মানুষটি প্রবীণ হওয়ার কারণে অতি আপনজনদের দ্বারা রুঢ় আচরণ, আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা অসম্মান, পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অশ্রদ্ধার সম্মুখীন হয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন হয় ভিন্ন নির্যাতন। অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা না পাওয়া, সেবা-শুশ্রূষা না পাওয়া, পথ্য না পাওয়া, উঁচুকন্ঠের কথা শোনাসহ বিভিন্ন প্রকার ঘাটতিজনিত কারণে শয্যাশায়ী হয়ে পরিবারের সকল সদস্যের কাছে এক বোঝা হিসেবে চিহ্নিত হন। তখন হয়তো তিনি জীবনের হিসাব মেলাতে না পেরে আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েন বা কোন বৃদ্ধাশ্রমের স্থায়ী বাসিন্দা হন।
এ অবস্থা আমাদের নিকট কোনক্রমেই কাম্য নয়।
প্রবীণ ব্যক্তিটির প্রথম জীবনের ছোট-খাটো বা বড় কোনো ভুল যেমন:- অধিক বিবাহ/ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে সময় না দেয়া/তাদের কথামত কাজ না করা/অসম বিয়ে করা/আনন্দ-ফুর্তিতে সময় ও অর্থ ব্যয় করা/ছেলে-মেয়েকে ধর্মীয় শিক্ষায় উৎসাহী না করা/সঠিক শিক্ষায় ছেলে-মেয়েদের বড় না করা ইত্যাদি।
আমাদের সমাজে ছোটদের প্রতি স্নেহ, ভালবাসা, আদর-সোহাগ পরিপূর্ণ ভাবে দেয়ার চেষ্টা করলেও প্রবীণদের ক্ষেত্রে এর যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষণীয়।
আমাদের মা-বাবারা ছেলে-মেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, নিরাপদ জীবন, প্রভাব প্রতিপত্তি ইত্যাদির আশায় নিজে কষ্ট করে অর্থ সঞ্চয় করেন। অপরদিকে প্রবীণ অবস্থায় যখন শিশুর মত কারো সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া উঠতে, বসতে, চলতে পারে না তখন প্রবীণ মানুষটি অনেক কিছুই প্রত্যাশা করেন, যা আমাদের পরিবারের নবীন সদস্যরা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, নিরাপদ জীবন, প্রভাব প্রতিপত্তি প্রবীণ মানুষটির কাছ থেকে পেয়েও অকৃতজ্ঞের মত আচরণ করেন। তারা মনে করেন প্রবীণ লোকটি এখন শুধুই অতীত। তার কাছ থেকে আর কিছুই আশা করা যায় না। তাই প্রবীণ মানুষটি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের সমাজে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য বড়ই বেমানান এবং বোঝাস্বরূপ।
তাই সে অসহায়। অহর্নিশ শুনতে হবে আপনজনদের উঁচু কন্ঠ, থাকতে হবে বৃদ্ধাশ্রমে।
অন্তিম ইচ্ছায় গুনতে হবে মৃত্যুর দিন,
যবনিকাপাত হবে একজন প্রবীণের গল্প।
আমরা আপনজনদের কাছ থেকে এ ধরণের ঘৃণ্য আচরণ আর চাই না। তাই প্রথম ও নবীন জীবনে পেশাগত শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলি ছেলে-মেয়েদেরকে। আদর্শবান, সৎ, চরিত্রবান, নীতিবান, সত্যবাদিতা, নিয়মানুবর্তিতা, আত্ম সমালোচক, অধ্যবসায়, পরিশ্রমি, ভদ্র, নম্র, বিনয়ী, কর্মঠ এবং ধর্মীয় কাজে অভ্যস্ত সহ অন্যান্য সকল গুণের অধিকারী করে গড়ে তোলার সকল চেষ্টা এখন থেকেই অব্যাহত রাখা জরুরী হয়ে পড়েছে। আমার বিশ্বাস বর্তমান প্রজন্মকে যদি এ ধারায় পরিচালিত করা যায় তাহলে অবশ্যই আমরা ২৫/৩০ বছরের মধ্যেই প্রবীণ সমাজ যে আমাদের শিকড় এবং মূল চালিকাশক্তি তা নির্দ্বিধায় সবার মাঝ থেকেই একবাক্যে উচ্চারিত হবে।
উন্নত দেশগুলিতে প্রবীণদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকেন তা আমাদের দেশে কোনোভাবেই প্রদান বা সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই হৃদয়ের গভীর থেকে উপলব্ধি করা আমার অভিমানের কথাগুলি উপস্থাপন করলাম, নতুন প্রজন্ম সৃষ্টির প্রস্তাবনার মাধ্যমে।
আসুন আমরা এই প্রবীণদের শত দোষত্রুটি ভুলে গিয়ে পরিবারের শিকড়/ছাতা হিসেবে মূল্যায়ন করি। তাহলে আমরা যারা এখন নবীন, তারা প্রবীণ সময়ে অবশ্যই মূল্যায়িত হবো।
শিকড়বিহীন যেমন গাছ নয়
তেমনি
প্রবীণবিহীন পরিবার নয়।
লেখক: মো: আফতাব আনোয়ার, আর্টিস্ট/সহকারী পরিচালক(অবসরপ্রাপ্ত), বিআরডিবি, ঢাকা।