★ ১৪ শিক্ষক বেতন নেন দুই পদের, বছরে বাড়তি নিচ্ছেন প্রায় ৩০লাখ ★ ভুয়া সনদে চাকরি নেয়ার অভিযোগ
★ ছয় শিক্ষকের নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি নিয়েও জালিয়াতি
★ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে: গভর্নিং বডির সভাপতি
অনিয়ম-দুর্নীতিতে যেন ডুবতে বসেছে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। কখনো গভর্নিং বডির সভাপতি, কখনো প্রতিষ্ঠান প্রধান, আবার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করছেন। সম্প্রতি একাধিক শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগে অনিয়ম, নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি না থাকা, আর্থিক লুটপাটের ফিরিস্তি তুলে ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৯ সালের জুলাই মাসে বর্তমান অধ্যক্ষ মির্জা মাহমুদা (বাংলা), হারুনুর রশীদ (ইংরেজি), সাজ্জাদ হোসেন (জীববিজ্ঞান), ওসমানগণি (হিসাব বিজ্ঞান), জেবুন্নেছা (ব্যবসা সংগঠন)-সহ ছয়জন প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয় কলেজটি। তবে ওই নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজির প্রতিনিধি ও বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে নয়জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন এমনটা দাবি করা হলেও চলতি বছরের ২৮ মার্চ ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রতিনিধি পাঠানোর চিঠির কোনো সত্যতা যাচাই সম্ভব হয়নি বলে লিখিতভাবে জানানো হয়। যদিও সেই সময়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা ২০১৯ সালে এমপিওভুক্তও হন। পাশাপাশি, প্রভাষক মো. বাহাদুর হোসেন, গণিতের সহকারী শিক্ষক মো. ওসমান গনি, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামানের নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও আছে অনিয়মের অভিযোগ।
২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হওয়া প্রভাষকরা সরকারি নীতিমালা না মেনে ৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের স্কেল ৩৫,৫০০-৬৭০১০/- বেতন নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠান থেকে।অথচ সরকারি খাত থেকে বেতন নিচ্ছেন প্রভাষক পদের।
তথ্যমতে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্য ন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন হারুনুর রশিদ। ওইসময় তিনি ননএমপিও প্রভাষক হিসেবে কলেজ থেকে ২২ হাজার টাকা স্কেলে বেতন পেতেন। কিন্তু অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে বেতন নিয়েছেন ৯৭ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকার উপরে। সর্বোসাকুল্যে এই সময় তিনি ৫০ লাখ টাকা বেতন হিসেবে নেন। এছাড়াও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা খাত থেকে কোটি টাকার বেশি তছরুপ করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।
তথ্য বলছে, অতিরিক্ত বেতন নেয়া এমন শিক্ষকের সংখ্যা ১৪জন। যাদের চাকরির বয়স অনুযায়ী সরকারি বেতনের পরিমাণ মাসে ২৮হাজার টাকার মতো। কিন্তু তারা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘সহকারী অধ্যাপক’ হিসেবে মাসে ৪৫হাজার টাকা পর্যঅন্ত বেতন নিচ্ছেন। প্রতিমাসে একেকজন বেশি নিচ্ছেন ১৭হাজার টাকারও বেশি। বছরে যার পরিমাণ প্রায় ২৩লাখ টাকা। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘শতভাগ শুদ্ধভাবে নিয়োগ পেয়েছি। তখন কোনো সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন না। পরে আমাকে কমিটি মনে করেছে তাই এই পদে বসেছি।’ একজন মানুষ দুই পদের বেতন নিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মির্জা মাহমুদা বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনাকে কিছু বলতে চাই না।’
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ আমলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা প্রয়াত সাহারা খাতুন, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান ও তার দোসর সাবেক অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়া ও খসরু চৌধুরীর ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠান প্রধান, গভর্নিং বডির সদস্যরা মিলে এসব অনিয়ম, দুর্নীতি করেছেন। অনিয়মের প্রতিবাদ করে নাজেহালও হয়েছেন একাধিক শিক্ষক। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ শিক্ষকরা সূর পাল্টে ফেলতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা এখন স্থানীয় বিএনপি নেতা এবং উত্তরা বিএনপি থানার নেতা সালাম সরকারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে বহাল তবিয়তে আছেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসেবও নিচ্ছেন। সালাম সরকার ভবিষ্যতে এখানকার সভাপতি হতে চান। ইতিমধ্যে এসব অভিযোগ গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বে থাকা সরকারের উপসচিব মো. ছাদেকুর রহমানের কাছেও এসেছে। তিনি সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু অভিযোগের কথা জেনেছি। ১৫টির মতো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে একটু সময় লাগবে। তবে কোথাও কোনো অনিয়ম পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।