প্রকাশ: শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১০:০২ PM
কোনোভাবেই কার্বন নিঃসরণ কমানো যাচ্ছে না। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে এবার নতুন এক প্রতিশ্রুতি দিল বিশ্বের ২২ দেশ। তারা বললেন, আগামী দশকগুলোতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে আরও বেশি ঝুঁকতে হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ–২৮। সম্মেলনের তৃতীয় দিন আমেরিকাসহ বিশ্বের ২২ দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তারা বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুতের কার্যক্রম বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ করা হবে। আমেরিকায় ১৮ শতাংশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ সরবরাহকারীরা একে নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব এবং বায়ু ও সৌরশক্তির নির্ভরযোগ্য পরিপূরক বলে জানান। তবে এর জন্য তহবিল গঠন ও অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা রয়েই গেছে। এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। খরচের কথা ভেবে গত মাসেই ইদাহুতে একটি প্রকল্প বাতিল করতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্টরা। আমেরিকা ছাড়া প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, ঘানা, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই প্রতিশ্রুতিতে তারা সইও করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা জন কেরি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগের জন্য হাজার হাজার কোটি ডলার পাওয়া যাবে। বিজ্ঞান বলছে, এভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করতে পারলে কার্বনের নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আগামী ২০৫০ সালেই যা সম্ভব। এর আগে শুক্রবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে খাদ্য ও কৃষির নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে সই করেছে ১৩৪টি দেশ। এর আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিকল্পনায় খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার জলবায়ু খাতে ২ বিলিয়ন ডলার ও নবায়নযোগ্য খাতে আরও ১৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে খাদ্য সংকট বাড়ছে বলে সর্তক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
এছাড়া জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় ২ কোটি ইউরো দেওয়ার ঘোষণা দেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। আর জলবায়ু সংকট সমাধানে ৩০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
প্রতিবারের মতো কপ-২৮ সম্মেলনেও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে কার্বন নিঃসরণ কমানো। সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ ৭০ হাজারের বেশি প্রতিনিধি। এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ১৯৮ দেশ ও অঞ্চলের ৭০ হাজারের বেশি প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী যোগ দিয়েছেন। ১৯৯২ সালে শুরু হওয়ার পর কপের আর কোনো সম্মেলনে এত বেশি মানুষ অংশ নেয়নি। সম্মেলন আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
২০২২ সাল ছিল দাবদাহ, খরা, অতিবৃষ্টি বা বন্যা, ঝড় ও ভূমিকম্পসহ নানা দুর্যোগে ভরা একটি বছর। এসব দুর্যোগ নিছক প্রাকৃতিক নয়। এর পেছনে যে মানুষের কর্মকাণ্ডের বড় ভূমিকা আছে, তা নিয়ে এখন আর কোনো বিতর্ক নেই। এসব দুর্যোগ পরিবেশ-প্রকৃতির পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।