রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪ ২১ আশ্বিন ১৪৩১
 
শিরোনাম: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ গ্রেপ্তার       ডেঙ্গুতে আরও ৫ মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৫ হাজার       রাজধানীতে ঝুম বৃষ্টি শেষে পানির নিচে যানবাহন, ঘরে শুকনো ফেরা দায়!       প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে স্পেশাল লাউঞ্জ হবে: আসিফ নজরুল       অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই: জামায়াত আমির       নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাবেন, সারাদেশে সেনা মোতায়েন রয়েছে: সেনাপ্রধান       প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনী রোড ম্যাপ চেয়েছি: বিএনপি মহাসচিব      


ভারতীয় আধিপত্যবাদের করাল গ্রাসে আমাদের টেলিকম ও আইসিটি খাত
ড. অহিদুল ইসলাম
প্রকাশ: শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪, ৫:০৩ PM

একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের জন্য বিদেশি (বিশেষতঃ ভারতের) নিয়ন্ত্রণে থাকা টেলিকম এবং আইসিটি খাতের ভয়াবহতা কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা কি আমরা জানি?

শহীদ আবু সাঈদ ও তার সঙ্গীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখতে এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করতে আমাদের জানতে হবে যে, কীভাবে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ভারতীয় আধিপত্যের করায়ত্তে চলে যাচ্ছে।

ভারতীয় নিয়ন্ত্রণের জাল

বাংলাদেশে ব্যবহৃত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের ৫৫% আসে বেনাপোল দিয়ে, যা মূলত ভারতীয় তিনটি শক্তিশালী কোম্পানি - ভারতী এয়ারটেল, টাটা কমিউনিকেশনস, এবং জিও টেলিকমিউনিকেশন্সের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এই ব্যান্ডউইথের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আমদানি করে ৭টি আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) সংক্রান্ত দেশীয় কোম্পানি, যাদের লাইসেন্স ভারতীয় সুপারিশে প্রদান করা হয়েছিল। এর মধ্যে সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড (SCom) প্রায় ৫০% ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে।

ভারতের সেবাদাস সামিট কমিউনিকেশনস

বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (ITC) এর সেবা দানকারী অন্যতম বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান হলো সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড, যা এই খাতের মোট ব্যান্ডউইথের এক পঞ্চমাংশ প্রদান করে থাকে। 99.99% আপটাইম নিশ্চিত করার মাধ্যমে, SCom একটি ITC অপারেটর হিসাবে বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে শীর্ষস্থান দখল করেছে। টাটা কমিউনিকেশনস লিমিটেড এবং ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব স্থাপন করে সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড বিভিন্ন সাবমেরিন ক্যাবল যেমন I2I, IMEWE, TIC, TGN-EA, SMW3 এবং SMW4 এর মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ প্রদান করছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ভারতীয় স্বার্থ রক্ষায় অনুগত তাবেদার অপশক্তি এই সামিট কমিউনিকেশন্সের হোতা কারা তা খুঁজে বের করতে কারও বেগ পেতে হবে না।

https://www.summitcommunications.net/itc। এই খাতের সাতটি কোম্পানিই ভারতের স্বার্থের তাঁবেদার হয়ে ভারতের সুপারিশে বাংলাদেশে দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুমোদন লাভ করে।

ভারতের দোসর FGL

SCom-এর পরেই অবস্থান করছে Fiber@Home Global Ltd. (FGL), যা একইভাবে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ নিয়ন্ত্রণ করছে। FGL দাপটের সঙ্গে বাংলাদেশে একটি নেতৃস্থানীয় ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (ITC) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যা এই খাতের মোট ব্যান্ডউইথের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রদান করে আসছে।

ভারতীয় কোম্পানিসমূহ- টাটা কমিউনিকেশনস লিমিটেড, ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স জিও এবং লাইটস্ট্রমের মতো এই খাতের আন্তর্জাতিক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে FGL কৌশলগতভাবে আইপিএলসি এবং আইপি ট্রানজিটকে আন্তর্জাতিক রুটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমাদের জানতে হবে FGL-এর পেছনে ফ্যাসিবাদী শক্তির পদলেহী কারা, যারা ভারতীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে ভারতীয় স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। https://www.fiberathomeglobal.net/ITC.html

দেশীয় সক্ষমতার বিপরীতে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ

বাংলাদেশে এখন প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক আছে যাদের বড়ো একটা অংশ ফেসবুক এবং ইউটিউব ব্যবহার করে। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে এই দুইটা সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি। তারা কলকাতায় তাদের ডাটা সেন্টার বসিয়েছে। এখন বাংলাদেশে যখন কোনো ব্যক্তি ইউটিউব ব্যবহার করে তখন সে গুগলের কলকাতা/চেন্নাই ডাটা সেন্টার এ সংযুক্ত হয়। এতে সিঙ্গাপুরে অবস্থিত গুগলের ডাটা সেন্টারে কানেক্ট করতে যে সময় লাগে তার থেকে ৮/৯ মিলি সেকেন্ড সময় কম লাগে। স্বভাবতই ইন্টারনেট ট্র্যাফিক তখন বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্যাবলের (কক্সবাজার এবং কুয়াকাটা) এর পরিবর্তে আইটিসি দিয়ে গমন করে। এতে করে প্রতি মাসে আমাদের ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের একটা বড় অংশ ডলারের মাধ্যমে ভারতীয় কোম্পানিকে পেমেন্ট করতে হয়। অথচ এই চাহিদা আমাদের দেশীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে মেটানো সম্ভব।

এছাড়াও বাংলাদেশের বহির্গামী এবং অন্তর্মুখী সকল ইন্টারনেট কন্টেন্ট সহজে মনিটর করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরটিকে আগ্রাসী ভারতের হাতে তুলে দিয়ে আমাদের তথ্য স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে।

শুধু কী তাই? আমাদের দেশের যেখানে পূর্ণ সক্ষমতা আছে এই সেক্টরটিকে সার্বিকভাবে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আর্থিকভাবে অনেক টাকা সাশ্রয় করে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে নিজের মতো করে স্বনির্ভর ও উন্নত করা, সেখানে দেশের স্বার্থকে একেবারেই বিবেচনা না করে ভারতের কোম্পানিগুলোকে আমাদের রক্ত চুষে খাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিরোধে করণীয়

আমরা যদি সত্যিই দেশকে ভালোবাসি, আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বনির্ভরতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে চাই, তাহলে এই ভয়াবহ বাস্তবতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আজ সময়ের দাবি। প্রয়োজন তথ্যভিত্তিক গবেষণা এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার, যাতে আমরা এই আধিপত্যবাদের জাল ছিন্ন করে একটি শক্তিশালী, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।

লেখক: ড. অহিদুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, এটর্নী







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাত, দুই স্কুলছাত্র নিহত
সফল নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মান: মান্না
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
আবারো হলিউডে দেখা যাবে দীপিকাকে?
মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য সুখবর
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

ঈদে আসছে অনিক বিশ্বাসের অ্যাকশন ছবি ‘খোদা হাফেজ’
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক হলেন কালীগঞ্জের সন্তান মতিউর রহমান
শ্রীপুরে নরসুন্দর (নাপিত) এর হাতে পোশাক শ্রমিক খুন!
কালীগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত
সোনারগাঁয়ে অপহৃত মাদ্রাসার ছাত্র উদ্ধার গ্রেফতার ৩
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com