প্রকাশ: সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪, ৫:৩৬ PM
সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্বিচারে গণ-গ্রেফতারের প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজ’। সমাবেশ থেকে শিক্ষকরা আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
সোমবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকদের সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইদ ফেরদৌস। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ড. সাইদ ফেরদৌস বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আপনারা আপনাদের প্রতিপক্ষ ভাবছেন। সেই শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের খোলনলচে পাল্টে দিতে এসেছে। স্বাধীনতার পর থেকে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রে যে লাগাতার নৈরাজ্য চলেছে, হলগুলোতে যে সুপরিকল্পিত নিপীড়ন চলেছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের, সে সমস্ত কিছুকে পাল্টে নতুন ইতিহাস লিখবার পথ তৈরি করেছে এই শিক্ষার্থীরা। সেই শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকটি দাবির সাথে আমরা সমর্থন জানাই।’
এই শিক্ষক নেতা বলেন, ‘ছাত্রদের মৃত্যুতে যাদের দায় দায়িত্ব আছে তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক। আমরা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিকে সমর্থন করি। কিন্তু সবার আগে হত্যা বন্ধ হোক। সবার আগে গুম অপহরণ বন্ধ হোক।’ সমাবেশে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, ‘১৯৬৯ সালে অধ্যাপক শামসুজ্জোহা ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন ফেব্রুয়ারি মাসে। আমরা এখানে যারা জমায়েত হয়েছি, আমরা শহীদ শামসুজ্জোহার উত্তরসূরি। আমাদের যে সন্তানরা, যে ছাত্ররা, যে অধিকারের জন্য, যে বৈষম্যহীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, লড়াই করছে, তারা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরসূরি। এই লড়াইয়ের ফলাফল কী হবে সেটা ইতিহাসই আমাদের নির্দেশ করছে। আর আমাদের করণীয় কী সেটা ইতিহাস আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা সেই দায়িত্ব নিশ্চয় চালু করব।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ছাত্রদের ওপর যে মামলা হচ্ছে মামলাটা হলো পুলিশের মামলাবাজি এবং মামলাবাজি হলো পুলিশের ব্যবসা। আপনারা এই ব্যবসা বন্ধ করুন। ছাত্রছাত্রীদের অযথা মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘর থেকে বাচ্চাদের ধরে নিয়ে আসছেন। মোবাইলে কী ধারণ করা আছে না আছে, পাঁচ কোটি মানুষের মোবাইলে আপনি এই আন্দোলনের ছবি পাবেন। তাহলে পাঁচ কোটি মানুষকে আপনি জেলে দেবেন। জেল বড় করেন। কারণ মোবাইল চ্যাক করলে সবার মোবাইলে আপনারা আন্দোলনের চিত্র দেখবেন৷ আমি সুস্পষ্টভাবে বলব, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেন। বাচ্চাদের নিজের কাজে ফিরে আসতে, পড়ালেখায় ফিরে আসতে দেন। আর আপনারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে ফিরে আসুন। স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে থেকে দেশের উন্নয়ন তো দূরের কথা দেশের মানুষের কাছে কোনোদিন পৌঁছাতে পারবেন না৷’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক সায়মন রেজা, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ নাহিদ নেওয়াজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসুদ ইমরান, ঢাবি আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রীতু শারমিন, স্ট্যাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তামান্না মাকসুদ, ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে দেশাত্মবোধক গানে গানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত স্থানগুলোতে পদযাত্রা করেন শিক্ষকরা। এর আগে শাহবাগে জড়ো হয়ে সেখান থেকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আসেন তারা। কর্মসূচির শুরুতে তারা এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।