সম্প্রতি, পোশাক শিল্পে মজুরি ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি এবং অন্যান্য দাবিতে শ্রমিকরা ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেছেন। একই সময়ে, চাকরিচ্যুত শ্রমিক এবং চাকরিপ্রত্যাশীরা চাকরির দাবির পাশাপাশি নিয়োগে নারী-পুরুষের সমতা দাবি করে সড়ক অবরোধ করেছেন। এ সময় বেশ কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর হয়, যার ফলে সাভার, আশুলিয়া এবং গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা দেখা দেয়। এই অস্থিরতা এখন অন্যান্য শিল্পেও ছড়িয়ে পড়ছে। তবে, অভিযোগ রয়েছে যে এই অস্থিরতার পেছনে তৃতীয় পক্ষের হাত রয়েছে, বিশেষ করে বিএনপি নেতারা ঝুট ব্যবসার দখল নিতে এবং বিভিন্ন কারখানায় আধিপত্য বিস্তার করতে তৎপর হয়েছেন।
সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে গত এক সপ্তাহ ধরে ৬৫টি কারখানায় অস্থিরতা দেখা গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বহিরাগত শ্রমিকদের কারণে এই অস্থিরতা ঘটেছে। অনেক নিয়মিত শ্রমিক কাজ করতে পারেননি এবং বহিরাগতদের আন্দোলনে যোগ না দেওয়ায় কারখানায় ভাঙচুর করা হয়েছে। এর ফলে মালিকপক্ষ বাধ্য হয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে এবং উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। তবে, শনিবার সব বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন করে কয়েকটি কারখানায় আবারও ভাঙচুর ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে, ফলে ১৭টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। কারখানার মালিকরা জানান, শ্রমিকদের উসকানিতে তৃতীয় পক্ষের হাত রয়েছে। তারা ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও এই খাতে আধিপত্য বিস্তারে বিএনপি নেতাদের ইন্ধনে শ্রমিক বিক্ষোভ ঘটাচ্ছেন। বহিরাগতরা এসে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে এবং কারখানায় ভাঙচুর ও সহিংসতা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৫ আগস্টের পর সাভার ও আশুলিয়ার পোশাক কারখানার ঝুট, ক্যাটারিং এবং টিফিন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাদের দলের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৭০ শতাংশ কারখানার ঝুট ব্যবসা এখন বিএনপি নেতারা দখলে নিয়েছেন। অন্যান্য কারখানার ঝুট ও টিফিন ব্যবসা পুরোপুরি দখলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে শ্রমিক বিক্ষোভ উসকে দেওয়া হচ্ছে। বাইরের লোকজনের মাধ্যমে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর ঘটানো হচ্ছে, এমনকি সড়ক অবরোধও করা হচ্ছে। জামগড়া ও বাইপাইল এলাকার মালিকরা জানিয়েছেন, এসব এলাকায় শ্রমিকরা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে না। বহিরাগতদের এনে কারখানার সামনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চালানো হচ্ছে, যার ফলে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
আশুলিয়ার অন্তত ১০টি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিকরা মজুরি, টিফিন ভাতা, হাজিরা বোনাস এবং বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়ে এবং অন্যান্য কারখানায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে দেয়। যদিও মালিকপক্ষ তাদের দাবিগুলি মেনে নিয়েছে, কিন্তু বাইরের লোকজনের হামলা ও ভাঙচুরের ভয়ে শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেছেন, "আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলনে সবসময় পাশে থাকি, কিন্তু এবারের দাবিগুলো সঠিক নয়। বেশিরভাগ আন্দোলনকারী বহিরাগত, তাদের দাবিগুলো শ্রমিকদের মূল সমস্যা নয়।" বাংলাদেশ গামের্ন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, "এই আন্দোলনে শ্রমিক সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শ্রমিক সংগঠনের দাবি হলো বেতন বৃদ্ধি এবং রেশনিং চালু করা। কিন্তু বর্তমানে যে দাবি উঠেছে, তা শ্রমিকদের কাছ থেকে আসেনি।"
আশুলিয়ার শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, "বেশিরভাগ কারখানা শনিবার খোলা ছিল। শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। বিক্ষোভের ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।"
বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন এমন অভিযোগে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি আবু আশফাক বলেন, "যদি বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পোশাকশিল্প আমাদের সম্পদ, তা রক্ষায় আমরা সব সময় পাশে আছি।" এভাবে, পোশাক শিল্পে চলমান অস্থিরতা ও সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক প্রভাব, তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ এবং ঝুট ও ক্যাটারিং ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের দ্বন্দ্ব চিহ্নিত করা হয়েছে।