প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪, ৬:২৮ PM
শেখ হাসিনার সরকারে পতনের পর গ্রেফতার রথী-মহারথীরা নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত। ডিবি পুলিশের রিমান্ডে তারা দিচ্ছেন চাঞ্চল্যকর নানা তথ্যও। বেশি জেরার মুখে আছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান।
তারা ডিবিকে জানিয়েছেন, আন্দোলনের শেষের দিকে ছাত্রদের পক্ষে কথা বলায় পলককে গণভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর চাপের কারণেই টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে ৫ কোটি টাকার চুক্তি বাতিল করা হয়। টুকু জানান, মন্ত্রী হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। শুধু প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন। সালমান এফ রহমান বলেন, এর আগে আমি ২ বছর জেল খেটেছি। সুতরাং আমার কোনো সমস্য হবে না। তবে আমাকে জেলে রাখা হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর জিয়াউল আহসান বলেন, আমার ওপর বিশেষ দায়িত্ব ছিল। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে সবার মোবাইল ফোনকল রেকর্ড করা হয়নি। নির্দিষ্ট কিছু লোকের ফোনকল রেকর্ড করা হয়। কারও হোয়াটসঅ্যাপস কল রেকর্ড করা হয়নি। ভয় দেখানোর জন্য এটা ছড়ানো হয়েছে যে, হোয়াটসঅ্যাপ রেকর্ড করা হচ্ছে।
ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা আসামি সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার পতনের একদফা অন্দোলনের শেষ পর্যায়ে ৪ আগস্ট গণভবনে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে আমি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছি, প্রয়োজনে আমাকে বলি দিন। তারপর শিক্ষার্থীদের অন্দোলন বন্ধ করুন। তাদের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। এ সময় সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাকে তেড়ে মারতে আসেন। তখন আমি সাহসী হয়ে গেলাম। প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আপনি স্টেপ ডাউন করুন। আওয়ামী লীগকে মানুষ ঘৃণা করছে, থুতু দিচ্ছে। এরপর আমাকে গণভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। পলক ডিবিকে জানান, স্মার্ট বাংলাদেশে গঠনে টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে ৫ বছর মেয়াদি সরকারের যে ৫ কোটি টাকার চুক্তি ছিল সেটা আমি বাতিল করতে চাইনি। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জোর করে ওই চুক্তি বাতিল করান।
কারণ, ওই স্কুলের অন্যতম কর্ণধার আইমান সাদিক অন্দোলনকারী ছাত্রদের পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তারা তাদের ফেসবুক প্রোফাইল লাল করেছিলেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে পলক বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে বাস্তবতা মেনে নেওয়ার অনুরোধ জানালেও তিনি মানতে রাজি হচ্ছিলেন না। এ সময় সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তা তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যদি সত্যিই দেশের স্থিতিশীলতা চাইতেন তাহলে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন না কেন?’ তখন চুপ থাকেন পলক। সাবেক ডেপুটি স্পিকার টুকুকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনারা কেন টাকার বিনিময়ে পুলিশ নিয়োগ দিলেন? জবাবে বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে পুলিশে নিয়োগের বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম।’ তখন টুকুকে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়, ‘আপনি যখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তখন অপনার ভাই এবং আপনার ছেলে সরাসরি টাকা নিয়েছেন। অন্য একজন ব্যক্তির কাছ থেকে আপনি নিজে সরাসরি টাকা নিয়েছেন।’ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি সব সময় আল্লাহর কাছে চেয়েছি, আমি যেন সংসদে যেতে পারি। আমার বয়স যখন ২৫ বছর তখন থেকেই এটা চাচ্ছিলাম। কিন্তু ৬০ বছর বয়সে আল্লাহ কবুল করেছেন। আমি মন্ত্রিত্ব চাইনি। জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামীকে হারানোর কারণে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা নিজেই আমাকে মন্ত্রী হওয়ার অফার করেন।
প্রথমে আমাকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এর ৬ মাস পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হলে আমি ওই দায়িত্ব নিতে চাইনি। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাংলার ছাত্রী হয়ে পুরো দেশ চালাচ্ছি। আর তুমি ম্যানেজমেন্টের ছাত্র হয়ে একটি মন্ত্রণালয় চালাতে পারবে না? তুমি দায়িত্ব নাও। সমস্যা হলে আমাকে বলবে। আমি সব সমস্যার সমাধান দেব।