হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজীবন সংগ্রাম করে বাঙালিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছেন। মাত্র ৫৫ বছরের জীবনের ১৪ বছরই কেটেছে কারাগারে। নিজের জীবনের চেয়েও যিনি তার দেশ ও দেশের মানুষকে বেশি ভালবাসতেন সেই প্রিয় স্বদেশেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসতমভাবে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী করে বিচার বন্ধ রাখা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
পৃথিবীর কেন সংবিধানে লেখা নাই যে, খুনীদের বিচার করা যাবে না। বাংলাদেশেই তা প্রথম ঘটেছিলো। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই চরম অসভ্যতা ও অমানবিকতার কলংক লেপন করে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদের খুনীদের রক্ষায় প্রণীত খুনী মোশতাকের ইনডেমনিটি বিলের বৈধতা দিয়েছিলেন খুনীদের নেপথ্যের খলনায়ক জিয়াউর রহমান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে খুনীদের হত্যাযজ্ঞে আমরা হারিয়েছি বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঘাতকদের নির্মম বুলেটের শিকার হন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামালের সহধর্মিণী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের সহধর্মিণী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক। প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাংবাদিক, কলামিস্ট শেখ ফজলুল হক মণির বাসা হামলা চালিয়ে তাকেসহ হত্যা করে তার অন্তঃসত্তা স্ত্রী আরজু মণিকে।
বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রহমান সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবি সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, শিশু সুকান্ত বাবু, রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত ও ১৪ দলের বর্তমান সমন্বয়ক ও মুখপাত্র, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর নিকটাত্মীয় রেন্টু খানকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। দেশের বাইরে থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দুই কন্যা ব্যতিরেকে পুরো পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের হত্যা করা হয়- যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুনিচক্র কেবল ব্যক্তি মুজিবকেই হত্যা করেনি। সেদিন হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির আশা আাকাঙ্খার প্রতিচ্ছবিকে। ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। খুনিচক্র সেদিন আঘাত হানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি জাতীয় চার মূলনীতির ওপর। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে তাদের করা হয় পুনর্বাসন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বাঙালি জাতির ললাটে লেপন করা হয় আরেকটি কলংকের দাগ। জেলের অভ্যন্তরে হত্যা করা হয় জাতীয় চারনেতাকে। এর পরের দিনই ৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একটি বিশেষ বিমানে রেঙ্গুন হয়ে ব্যাংকক পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় খুনি চক্রের পেয়ারে পাকিস্তানের একটি বিশেষ বিমানে করে লিবিয়ায়। খুনিচক্রকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে একটি প্রভাবশালী দেশ প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে। এই হত্যাকান্ড সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে ভয়ানকভাবে পিছিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার প্রাণপন চেষ্টা করে তাদের পেতাত্মারা। পঁচাত্তরের ক্ষমতাসীন সামরিক- বেসামরিক এলিটচক্র এই দেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত অবস্থান ও লক্ষ্য থেকে সরিয়ে এনে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশকে একটি ধর্ম-সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে। রাষ্ট্রের ওপর জনগণের মালিকানা বেদখল করে এবং সংবিধানের কর্তৃত্ব ধ্বংস করা হয়। অবলীলায় দেশব্যাপী চালানো হয় হত্যা, সন্ত্রাস, জোর-জবরদস্তি। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল তাহেরের হত্যাকান্ড, বিচার প্রহসনের নামে সশস্ত্র বাহিনীর শত শত মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও জোয়ানকে হত্যা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিবেচনায় আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ইত্যাদি এর নজির হয়ে ওঠে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। যা কমবেশি অব্যাহত থাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত। এই দীর্ঘ ২১ বছর হত্যা, গুম, জেল জুলুম থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্যাতন সহ্য করেছে আওয়ামী লীগের কয়েক লক্ষ নেতাকর্মী। এর দীর্ঘসময়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদকে অর্থাৎ ৭১-এর সশস্ত্র আলবদর, আল শামস, রাজাকারদের রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবাররা হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনি ব্যবস্থা থেকে শাস্তি এড়ানোর সুব্যবস্থা প্রদানের জন্য বাংলাদেশে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ এ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন।
তখন বাংলাদেশ সংসদ অধিবেশন না থাকায় শেখ মুজিবের একজন ঘনিষ্ঠ প্রতারক রাজনৈতিক সহযোগী, রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ একটি অধ্যাদেশের আকারে, ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এই কালো আইনটি প্রণয়ন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর তিনিই দেশটির রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫০ নামে অভিহিত ছিল। পরে ১৯৭৯ সালে সংসদ কর্তৃক এটি অনুমোদন করা হয়। যার ফলে এটি একটি আনুষ্ঠানিক আইন হিসেবে অনুমোদন পায়। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর সংশোধিত আইনে এ আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে রুপান্তর করেন খুনী জিয়াউর রহমান। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মধ্যে দিয়ে তার আমলে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করা হয়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করে জিয়া প্রমাণ করেছেন তিনি এই হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রের মূল কুশীলবদের-ই একজন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা জীবিত থাকার কারণে কোনো একদিন বাংলার মাটিতে এই হত্যাকান্ডের বিচার হতে পারে হয়তো সে আশংকা থেকেই নিজেকে বিচারের হাত থেকে বাঁচাতে জিয়াউর রহমান এটিকে আইনে রূপান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রায় ২১ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দায়িত্বে ছিল খুনীদের দোসর ও তাদের চেতনা লালনকারীরা, যারা এখনো পেয়ারে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেন। যার কারণে এই সময়ের কোন রাষ্ট্রপতি বা সরকার প্রধান এই কালো আইন বাতিল না করে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার ব্যাবস্থা করে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর সপ্তম জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করেন। এটি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের পথ প্রশস্ত করে। খুলে যায় বিচারহীনতার সংস্কৃতির পথ। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ হাইকোর্ট।
দীর্ঘ ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার কাজ শুরু করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় মামলার মাধ্যমে। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ১৫ জন আসামিকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। আসামি পক্ষের ১৫ জন উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পান। ওই আপিলে ১২ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল এবং ৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে এ মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার আবার এ বিচারকার্য চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৯ সালে লিভ-টু-আপিলের মাধ্যমে এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আপিল শেষে ১২ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে আদালত। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি তারিখে এদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। পলাতক খুনীদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে। দন্ডিত অন্য আসামি আবদুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের তালিকায় রয়েছে ১. লে. কর্নেল শরিফুল হক (ডালিম), ২. লে. কর্নেল আজিজ পাশা, ৩. মেজর একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, ৪. মেজর বজলুল হুদা, ৫. মেজর শাহরিয়ার রশিদ, ৬. মেজর রাশেদ চৌধুরী, ৭. মেজর নূর চৌধুরী, ৮. মেজর শরিফুল হোসেন, ৯. কর্নেল কিসমত হাশেম, ১০. লে. খায়রুজ্জামান, ১১. লে. নাজমুল হোসেন ও ১২. ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। পলাতকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আছে খুনি রাশেদ চৌধুরী, তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। নূর চৌধুরী আছে কানাডায়। এ ব্যাপারে কানাডার একটি আইন আছে, সেটা হলো কাউকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার বিধান সে দেশের আইনে নেই। এ কারণে আইনটিকে শিথিল করে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কানাডায় একটি মামলাও বাংলাদেশ সরকার করেছে এবং সেখানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামি আবদুল মাজেদ ২৫ বছর ধরে ভারতে পালিয়ে ছিলেন। সেখানে তিনি বিয়ে করে সংসারও করেছেন। করোনাভাইরাস আতঙ্কে সেখান থেকে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ ময়মনসিংহ সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি। দেশে ফেরার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল।
ইতিহাসের কাঠগড়ায় যদি আনরা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দাঁড় করাই তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের জন্য দায়ী কে, মোশতাক না জিয়া? যেহেতু মোশতাক সরকার ছিলেন সেনা সমর্থিত, জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাপ্রধান। সেহেতু এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না। খুনিদের জন্য পদোন্নতি, সুযোগ-সুবিধা সবসময়ই অবারিত ছিল। ১৯৭৬ সালের ৮ জুন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেন। শুধু তাই নয়- এসব খুনি এরশাদ ও খালেদা জিয়া সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় এবং রাজনৈতিক দল গঠন করে।
১৯৮০ সালের পর শাহরিয়ার রশিদ ও বজলুল হুদা প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি নামের একটি দল গঠন করেন। ১৯৮৭ সালে ফারুক রহমান ও আব্দুর রশিদ গঠন করেন ফ্রিডম পার্টি। পরে বজলুল হুদাও ফ্রিডম পার্টিতে যোগ দেন। এর আগে ১৯৮৬ সালে এরশাদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করেন লে. কর্নেল ফারুক। বজলুল হুদা ফ্রিডম পার্টি থেকে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে মেহেরপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনে কুমিল্লা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লে. কর্নেল রশিদ। এভাবেই এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে খুনিরা সংসদে আসার সুযোগ পায়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। খুনিদের বিচারের মাধ্যমে সে কালো ল আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকে তাদের শাসন আমলে মানবাধিকার নিয়ে হত্যা খুনের দোহাই দিয়ে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কত দায়িত্ববোধ! আইন করে শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্রে জনগণকেই নয়, ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়েছিল শেখ রাসেল ও সুকান্ত বাবুর মতো দুই নিষ্পাপ শিশুকে। হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ মণির অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী আরজু মনিকে। আইন করে এ নির্মমতার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নিয়ে আজ পর্যন্ত তাদের মুখে কোনো কথার ফুলঝুরি শুনতে পায়নি।
১৫ আগস্টের মতো মর্মন্তুদ ঘটনা আমরা আর দেখতে চাই না। যে আইনের মাধ্যমে খুনিদের উৎসাহিত করা হয়েছিল তার বৈধতাদানকারী জিয়া কি শুধুই খুনীদের বাঁচাতে না এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন নাকি এর মাধ্যমে নিজেকেও রক্ষা করতে চেয়েছিল তা আজ আর কারো অজানা নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা আজ দিনের আলোর মতো পরিস্কার। তাই বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য খলনায়ক খুনী জিয়ার মরণোত্তর বিচারে বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করতে অনতিবিলম্বে তদন্ত কমিশন গঠন ও তার কার্যক্রম দৃশ্যমানের অপেক্ষায় দেশবাসী।
মানিক লাল ঘোষ : ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য